এবার ভিপি নুরের পদত্যাগ চাইলেন জিএস রাব্বানী

13

চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের পদ খোয়ানোর পর গোলাম রাব্বানীকে ডাকসু জিএস পদ ছাড়তে বলেছিলেন ভিপি নুরুল হক নুর; এবার নুরকেই পাল্টা আহ্বান জানালেন রাব্বানী। সম্প্রতি ইন্টারনেটে আসা দু’টি ফোনালাপের উপর ভিত্তি করে নুরের বিরুদ্ধে ‘টেন্ডারবাজির’ অভিযোগ তুলে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাব্বানী।
গতকাল রবিবার দুপুরের এই সংবাদ সম্মেলনে রাব্বানীর সঙ্গে ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। রাব্বানী বলেন, ‘আমরা ডাকসু পরিবার নূরের এই অপকর্মের দায়ভার নিতে রাজি নই। আমাদের আহ্বান থাকবে, নূর যেন তার ডাকসুর ভিপির পদ থেকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করেন’। নূর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে ‘নৈতিক স্খলনের দায়ে’ তাকে বহিষ্কার করতে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান রাব্বানী।
এদিকে ‘তদ্বির ও টেন্ডারবাজির’ অভিযোগকে অপপ্রচার বলে দাবি করে আসা নূর এই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ছাত্রলীগ নেতাদের কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন দেখছেন না তিনি। খবর বিডিনিউজের
এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডাকসুর নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে নূরসহ দু’জন নির্বাচিত হলেও জিএসসহ বাকি সবগুলো পদে বিজয়ী হয় ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরা। কয়েক মাস আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলার পর দু’জনকে বরখাস্ত করেন শেখ হাসিনা। তখন ভিপি নুর জিএস রাব্বানীকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নৈতিক স্খলনের দায়ে তাকে বরখাস্ত করতে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তাতে কান দেননি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।
জাহাঙ্গীরনগরের উপাচার্যের অভিযোগ নিয়ে রাব্বানী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘সেই ফোনালাপে আমার সংশ্লিষ্টতা যে ছিল না, সেটা কিন্তু ক্লিয়ার হয়েছে। যাই হোক যেহেতু ওই সময় একটা অভিযোগ ওঠেছিল, আমি আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং আমার নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি এবং আমার সভাপতি। এরপরে আমরা বারবার তদন্ত করতে বলেছি এই ঘটনার। এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি কিন্তু গঠন করা হয়নি’।
ছাত্রলীগের পদ ছাড়লেও ডাকসুর পদে থাকা রাব্বানী বলেন, ‘আমি ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো কাজ করিনি। যদি আমার নামে ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ আসে, অবশ্যই আমি আমার জিএস পদ থেকে অব্যাহতি নেব বা পদত্যাগ করবো। আর নুরের বিরুদ্ধে ভিপি পদ ব্যবহার করার কিন্তু কোনো শুধু অভিযোগ নয়, দালিলিক প্রমাণও রয়েছে, অডিও-ভিডিও’।
সম্প্রতি নুরের দু’টি অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে তাকে দরপত্রের জন্য তদ্বির করতে শোনা যায়। তবে নুর দাবি করেছেন, তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য মোবাইল কথোপকথনের খন্ডিতাংশের অডিও প্রচার করা হচ্ছে। ওই অডিও’র ভিত্তিতে নূরের পদত্যাগ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রাব্বানীরা; যাতে ছিলেন ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, মুহা. মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।
এতে বলা হয়, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আপামর ছাত্র সমাজের পক্ষে নুরুল হক নুরের প্রতি আহ্বান জানাই, নিজের সকল অপকর্ম, ব্যর্থতা, অক্ষমতা স্বীকার করে ডাকসুর ভিপি পদ থেকে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির নিকট আমরা আহ্বান জানাই, ভিপি পদটিকে অপবিত্র, অপব্যবহার করার অপরাধ স্বীকার করে নুর যদি পদত্যাগ না করে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে ডাকসু থেকে বহিষ্কার করা হোক’।
নুরের বিষয়ে তদন্ত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিও আহ্বান জানান ডাকসুর এই নেতারা।
অডিও ক্লিপ নিয়ে নূরের বক্তব্যের জবাবে রাকিব বলেন, ‘আলোচিত সেই আন্টির ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক পুরো বিবরণ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। যে ‘পরিচিত ভাইয়ের’ সাথে কথোপকথন, তার পরিচয় প্রকাশ করা হোক। যুক্তরাজ্য প্রবাসী যার সাথে কথোপকথন ফাঁস হয়েছে, তার পরিচয় প্রকাশ করা হোক। আমরা এও জানতে চাই, কি এমন কথা, লেনদেন, সম্পর্ক তাদের মধ্যে বিদ্যমান, যা হোয়াটসঅ্যাপে বলতে হবে? অভিযোগ যেহেতু নুরের দিকে, তাই নুরকেই এসব প্রকাশ করতে হবে’।
নুর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছেন দাবি করে রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে নুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে, যার এক পয়সাও এ ৯ মাসে ব্যয় না করে নুর শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেছে, নিজের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে’।
এই সংবাদ সম্মেলনের পর ভিপি নূর তার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে, ডাকসুর ভিপি বিন্দুমাত্র অনৈতিক লেনদেন করেছে, অবৈধ লেনদেন করেছে, দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়েছে, প্রমাণটা গণমাধ্যমে উপস্থাপন করলেই ডাকসুর ভিপি পদত্যাগ করবে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমি পদত্যাগ করব, কিন্তু ছাত্রলীগের কথায় ডাকসুর ভিপি পদত্যাগ করবে না কিংবা ছাত্রলীগের কথায় কর্ণপাত করবে না’।