এবার ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় লকডাউনে শিথিলতা কঠোরতার পাশাপাশি সচেতনতাও কাম্য

15

দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, গতকাল বৃহস্পতিবারের সর্বোচ্চ মৃত্যুর হারসহ গত কয়েক দিনের সংক্রমণের চিত্র থেকেই তা স্পষ্ট। চোখের পলকে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। এ পরিস্থিতিতে সরকার গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। লকডাউন ঘোষণা করেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সময়ে গণপরিবহণ-বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। শপিং মল-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতিটিই নেওয়া হয়েছে জনস্বার্থ রক্ষার জন্য। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত অবহেলা বা অমান্য করা হলে তাতে কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এমনটি নয়। একজন ব্যক্তির অবহেলা বা ভুলের কারণে কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলার অবকাশ নেই।
অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ‘লকডাউন’ ঘোষণার পর ৪এপ্রিল রোববার ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে নগরীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ আরোপের খবরে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এসব টার্মিনালে হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা। এতে নগরজুড়ে তীব্র যানজটের পাশাপাশি দেখা দেয় যানবাহন সংকটও। অফিসফেরত যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও অটোরিকশা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মানা দূরের কথা, এ সময় অনেকে ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও গাদাগাদি করে বাসে উঠেছে। রোববার ঢাকা-চট্টগ্রামে গভীর রাত পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। বাস ও ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেককে ট্রাকে চড়েও গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে লকডাউনের শুরুরদিন ৫ এপ্রিল ছিল আরো ভয়াবহ অবস্থা। চট্টগ্রাম নগরীর শপিংমলসহ দোকান মালিক-কর্মচারিরা হঠাৎ লকডাউনকে থোড়াইকেয়ার করে মাকের্ট-দোকান খোলা রাখার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে দেয়। হাজারো দোকান-মালিক-কর্মচারি কোনরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক ছাড়া আন্দোলনে নেমে পক্ষান্তরে সরকারের স্বাস্থ্যবিধিকে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে দাবি করে এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে বলে আশ^স্ত করেছেন। তবে এখানে আমাদের কথা হচ্ছে, সরকার জনস্বার্থে লকডাউন করেছে, জনগণ বাঁচলেও তো বাকি সব বৈষয়িক চিন্তা। এছাড়া দোকান মালিক সমিতি বা কর্মচারি সমিতি এদেশের একটি স্বীকৃতি ব্যবসায়ী ও কর্মচারিদের সংগঠন। এ সংগঠন লকডাউনকে চ্যালেঞ্জ না করে বরং সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করকে পারতেন। আমরা জানি সরকার কঠোর গর্জনে লকডাউন ঘোষণা করলেও বর্ষণ তত ভারি নয়। লক ডাউনের মাত্র একদিনের মাথায় নগরীর অভ্যন্তরে সীমিত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ চালুসহ বেশ কিছু বিষয় শিথিল করেছে। সম্পাদকীয় লেখার সময় জানতে পারলাম সীমিত আকারে শর্তসাপেক্ষে শপিংমল ও দোকান খোলার সিদ্ধান্তও নিতে যাচ্ছে সরকার। সুতরাং ধরেই নেয়া যায়, সরকার ‘বজ্র অ্্াঁটুনি ফসকা গেরো’ নীতিতেই লকডাউন কার্যকর করতে চায়। এতে আমাদেও ধারণা, লকডাউন সম্প্রতি বিরোধী দলগুলোর হরতালের মতই কার্যকর হতে পারে বটে সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন কাজ হবে-এমনটি মনে করার কোন যুক্তি নেই। কারণ সাধারণ মানুষ স্বাস্থবিধিকে তেমন আমলে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আহŸান জানানো সত্তে¡ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জনগণের মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বস্তুত জনগণের অসতর্কতা ও উদাসীনতার কারণেই দেশে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হলেও ঘরমুখো মানুষের ভিড়, রাস্তায় জমায়েত-মিছিল দেখে বোঝা কঠিন দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে জনগণকে বাধ্য করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ।