এবার ফ্লাইওভার থেকে টোল আদায় করতে চায় সিডিএ

105

নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতে ফ্লাইওভারের নিচে ১৪টি দোকান ও তিনটি সুপারশপ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পরে জাস্টিস ফাউন্ডেশন নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের করা রিটে ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক বিভাজকের ওপর দোকান নির্মাণের ওপর ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। এবার সে ফ্লাইওভারে চলমান গাড়ি থেকে টোল আদায় করে খরচ মেটাতে চাইছে সিডিএ। এজন্য সিটি কর্পোরেশনের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তবে পূর্বঘোষণা ছাড়া টোল আদায় রীতিমত জনগণের সাথে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মতে- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত ফ্লাইওভারসমূহ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ উপরে ও নিচে সৌন্দর্যবর্ধন, সৌন্দর্যবর্ধনের আনুষঙ্গিক কাগজসমূহ এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য সিডিএ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারবে। নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান সিডিএ অনুমোদিত নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ওই ফ্লাইওভারের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ, ফ্লাইওভারের উপরে ৯০ ওয়াটের ৪২২টি, নিচে গার্ডার ও পিয়ারক্যাপের সাথে সংযুক্ত ৭০ ওয়াটের ৬৯৮টি, ৪০ ওয়াটের ২৪২টি ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজের জন্য ১২ ওয়াটের ২ হাজার ১০০টি রঙ্গিন এলইডি লাইটসহ মোট ৩ হাজার ৫০০টি বৈদ্যুতিক বাতির বিল পরিশোধ এবং ফ্লাইওভারের উপরে ও নীচে সৌন্দর্যবর্ধন কাজের পরিচর্যা করার জন্য প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন রয়েছে। তবে উল্লেখিত প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে টোল আদায়ের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। তাই ফ্লাইওভারটির সুষ্ঠু ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টোল আদায়ের বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি পত্র চসিকে পৌঁছায়।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা পূর্বদেশকে বলেন, ফ্লাইওভারটি নগরবাসীর জন্য করা। তাই নগরবাসী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে আমরা মতামত জানাবো।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৪ ডিসেম্বর সিডিএ এক স্থানীয় পত্রিকায় দোকান ও সুপারশপ বরাদ্দের বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। সে অনুযায়ী, প্রতিটি দোকানের আয়তন ১৩২ বর্গফুট এবং প্রতিটি সুপারশপের আয়তন হবে ৭ হাজার বর্গফুট। তখন থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে চসিক, সিএমপিসহ নাগরিক নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে সিডিএ কে চিঠিও দিয়েছিল চসিক। পরবর্তীতে গত ১২ ফেব্রæয়ারি জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মো. মাহফুজুর রহমান মিলন জনস্বার্থে একটি রীট করলে ছয়মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, এটি অনুমোদন নেওয়া হয়েছে আরও ১ বছর চারমাস আগে। এতোদিন জনগণকে অবহিত করা হয়নি, গোপন রাখা হয়েছে। হঠাৎ বলা হচ্ছে, ফ্লাইওভারে টোল আদায়ে সিটি কর্পোরেশনের মতামত দেওয়ার জন্য। ফ্লাইওভার যখন করা হচ্ছে তখন থেকে ডিপিপিতেও টোল আদায়ের কথা বলা হয়নি। এখন যদি ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায় করা হয়, তাহলে জন অসন্তোষ তৈরি হবে। এটা তো জনগণের সাথে রীতিমত প্রতারণা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে চট্টগ্রামের সবগুলো সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে। এভাবে যদি পূর্বঘোষণা ছাড়া টোল আদায় করা হয়, তাহলে মানুষের মাঝে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও দেশের কোথাও এরকম পূর্বঘোষণা ছাড়া ফ্লাইওভার থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে না, তাহলে চট্টগ্রামে কেন হবে ?