এবার প্রকাশ্যে কলেজ অধ্যক্ষকে পেটালেন এমপি

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এই সংসদ সদস্য তার কার্যালয়ে গত ৭ জুলাই রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ‘পিটিয়ে’ আহত করলেও মঙ্গলবার বিষয়টি প্রকাশ পায়। খবর বিডিনিউজের
অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলছেন, ঘটনার পর থেকে লজ্জায় তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহব্বল হওয়ার পাশাপাশি তিনি এখন আতঙ্কিত। ‘পেটানোর’ পর এমপি ওমর ফারুক দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে ওই কলেজ অধ্যক্ষ দাবি করেছেন। তবে এমপি ওমর ফারুক পেটানোর অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহীর কলেজ শিক্ষক সমিতি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন তারা।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের ডাকে ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন ‘ওমর থিম প্লাজা’য় যান গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আটজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। ওমর ফারুকের মালিকানাধীন ওই বিপণিতে তার একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখানেই ঘটে এই কান্ড। সেখানে উপস্থিত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে ওমর ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান, তার কলেজের কতিপয় শিক্ষক আরেক কলেজের অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। যদি এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর সংসদ সদস্য তার ফোনের রেকর্ড অন করে কিছু একটা অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন এবং তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সেলিম রেজাকে ধরে তার বাম চোখের নিচে ঘুষি মারেন। উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন। একপর্যায়ে চেম্বারে থাকা হকিস্টিক দিয়েও আঘাত করেন।
প্রায় ১৫ মিনিট পরে সেলিম রেজাকে এমপির কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যান আরেক কলেজের একজন অধ্যক্ষ। প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাঈদ আহমেদের চেম্বারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্বজন ও সহকর্মীদের সহায়তায় নগরীর বাসায় ফেরেন সেলিম রেজা।
মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা জানাজানির পর স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাশিয়াডাঙ্গা থানার রায়পাড়ায় বাসায় যান। অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার বিকালে সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ একজন ইউপি চেয়ারম্যান তার বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার কথা বলিয়ে দেন। তিনি বলেন, ফোনে সংসদ সদস্য ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সময় করে অধ্যক্ষকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
৭ জুলাইয়ের বৈঠকে উপস্থিত আরেক অধ্যক্ষ বলেন, কী বলব, কীভাবে বলব, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। একজন সংসদ সদস্য এমন কাজ করতে পারেন! ভাবতেই পারছি না। একজন কলেজ অধ্যক্ষকে গরুপেটা করা- কী সাংঘাতিক ঘটনা। কার কাছে বিচার দেব?
রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, একজন সংসদ সদস্যের কলেজ শিক্ষককে এভাবে পেটানোর ঘটনা ন্যাক্কারজনক। তার কোনো অপরাধ থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু সবার সামনে সংসদ সদস্য একজন অধ্যক্ষকে এভাবে পেটাতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার তীবৃ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
শিক্ষকদের এই নেতা বলেন, বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই ঘটনার বিষয়ে জানতে বুধবার বেশ কয়েকবার ফোন করেও সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের বক্তব্য জানতে পারেনি। তবে তাকে উদ্বৃত করে স্থানীয় সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে অনেকেই সেদিনের বৈঠকে গিয়েছিলেন। সেখানে তারাই মারামারি শুরু করছিল। আর সংসদ সদস্য গিয়ে তাদেরকে থামিয়েছিলেন। ঘটনাটি শুনে কথা বলে এমপি ওমর ফারুকের একই বক্তব্য পেয়েছেন বলে জানান রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। তিনি গতকাল বুধবাব বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করেছেন বলে শুনেছি। শুনার পর আমি এমপির সঙ্গে কথা বলেছি। এমপি আমাকে বলেছেন, এসব মিথ্যা ভিত্তিহীন খবর।
অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে অনিল কুমার বলেন, আমি প্রিন্সিপালেরর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। যতটুকু জানি, তিনি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা করবেন।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, একজন অধ্যক্ষের সঙ্গে এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তবে এই ঘটনার জন্য আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দিলে তখন তদন্তসাপেক্ষে মন্তব্য করা যাবে। এর আগে না জেনে কিছু বলা সমীচীন হবে না।