এবার খালে পড়ে গেল নারী

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর চান্দগাঁও বালুরটাল এলাকায় ওসমানিয়া খালে পড়ে যাওয়া এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশনের কর্মীরা। আনুমানিক ৬৫ বছর বয়সী ওই নারীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. বাহার উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ওই নারীকে খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি প্রায় গলা পর্যন্ত খালের কাদায় ডুবে যান। তাকে দ্রæত উদ্ধারের পর চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছিলেন না এবং নিজের নাম-ঠিকানা কিছুই জানাতে পারেননি। কথা বলে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে এলাকায় কখনো দেখেননি বলে জানান।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ মার্চ চান্দগাঁও থেকে নালায় পড়ে যাওয়া পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছিল ফায়ার সার্ভিস। স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের সামনের নালা থেকে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম শহরে নালায় বা খালে পড়ে যাওয়া এখন নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রীতিমত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত নালা ও খালগুলো। প্রায় সময় কোন না কোন নালা বা খালে মানুষ পড়ার খবর আসছে। এখানকার নালা-খালে পড়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত একবছরে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে নালা-খালে পড়ে। এদের মধ্যে একজনের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
এখনও বর্ষা শুরু হয়নি, প্রায় সবগুলো খালে পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। অনেক খাল আবার ভরাট অবস্থায় আছে। এ সময় মানুষ খালে পড়ে যাওয়াকে সবাইকে রীতিমতো হতবাক করে দিচ্ছে। আবার খাল থেকে উঠার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা। সব মিলিয়ে খাল-নালায় পড়ে যাওয়া এখন কৌতুহলের বিষয়ে রূপ নিয়েছে।
চলতি বছরের ২৬ মার্চ নগরের একটি নালায় পড়ে যায় এক শিশু। সেদিন বিকেলে নগরের পুরোনো চান্দগাঁওয়ের পাঠানিয়া গোদা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ফুটপাত দিয়ে দুই নারী হেঁটে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে থাকা এক শিশুও হাঁটছিল। হাঁটার একপর্যায়ে সাফা মারওয়া ইলেকট্রনিকসের সামনের ফুটপাতে থাকা গর্তে পড়ে যায় শিশুটি। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। এ সময় দুই নারী কোন রকম শিশুটিকে টেনে তুলতে সক্ষম হন।
গত বছরের ৩০ জুন নগরের চশমা খালে পড়ে এক অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৫ আগস্ট চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদের মাজারগেট এলাকায় ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। ৬ ডিসেম্বর নগরের চশমা খালে তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন। তিনদিন পর নগরের মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নগরের উন্মুক্ত নালা-খালে পড়ে একাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএ কেউ এর দায় নিচ্ছে না। এসব মৃত্যুর জন্য উল্টো পরস্পরকে দায়ী করে আসছে সংস্থা দুটি। জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। সিডিএর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সবগুলি খাল থাকলেও এখনও কোন সংস্থার অধীনে কোন খাল সেটাও পরিষ্কার নয়। খাল-নালায় পড়ে দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার দায় নিয়ে দুই সংস্থার পরস্পর বিরোধী অবস্থানে নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন মৃত্যুর জন্য দুটি সংস্থার গাফিলতিকে দায়ী করা হয়েছে।