এবার কামান দাগাতেই হবে

24

এম.এ. মাসুদ

অতি ক্ষুদ্র বা খুবই সাধারণ সমস্যার সমাধানের জন্য যদি বিশাল কোন আয়োজন করা হয়, তখন এ জাতীয় বিষয়কে রঙ্গ-রসিকতা করে বলা হয়, ‘মশা মারতে কামান দাগা’। কোন সাধারণ বা নগন্য সমস্যার উদ্ভব হলে সেই সমস্যার ধরণ বা গুরুত্ব অনুযায়ী তা সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়। যদি তা না করে সমস্যার আকার বা গুরুত্বের চাইতে বেশী কিছু আয়োজন করে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করা হয় তখন মানুষ এ জাতীয় ঘটনাকে কামান দাগার কথাই বলে থাকেন। কিন্তু চলমান সময়ে কামান দাগার কথা এখন আর রসিকতার পর্যায়ে পড়ে না। মশার বিরুদ্ধে কামান দাগা এখন সময়েরই দাবী। সন্ধ্যা হতে না হতেই মশার গুনগুনানি-ভন্্ভনানি গানের ছন্দের সাথে মনুষ্য দেহের প্রতি তার ভালবাসার প্রকাশ ঘটানোর পদ্ধতি নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মশক নিধনের জন্য প্রচার মাধ্যমে হামেশাই প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সে সব প্রচারণার মূল বক্তব্য অনুসরণ করেও মশার জন্ম নিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে মশা মারার যে সব ঔষধ পাওয়া যায়, মশক নিধনে সে সব ঔষধের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। তাছাড়া এসব ঔষধের মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঔষধও রয়েছে। অনেক ভূয়া কোম্পানি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অনেক ঔষধ তৈরি করে বাজারজাত করছে। আর নামী দামী কোম্পানিগুলি যে সব ঔষধ তৈরি করছে সে সবের কার্যকারিতা কতটুকু তা ব্যবহারকারীরা ভালোই জানেন। অবৎড়ংড়ষ, কধষধযরঃ গড়ৎঃরহ, এড়ড়ফ ঘরমযঃ, ঢঢ়বষ নামী কোম্পানির এসব ঔষধে মশা মরে না। অবৎড়ংড়ষ ছিটানোর পর মশা মাটিতে পড়ে যায়, কিছুক্ষণ পর আবার উড়াল দেয়। অবৎড়ংড়ষ এর প্রভাবে মশা হয়তো কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। হুশ ফিরলেই আবার মনুষ্য শরীরে হুঁল ফোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়া বাজারে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন নামের অসংখ্যা মশার কয়েল। এর মধ্যে কয়েকটা হলÑ ঞরমবৎ, ইড়ংং, চড়ষধৎ, ইড়সধ, ইধংঁহফযধৎধ, ঈধসবষ ইত্যাদি। এ সকল নামী-দামী এবং কিছু ভূয়া কোম্পানির মশার ঔষধ এবং কয়েল কতটুকু কার্যকর এবং মানবদেহে জন্য নিরাপদ তা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ভোক্তাদের অধিকার রক্ষার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে এবং ইঝঞও এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব মশার ঔষধের বিষয়ে জনগণের অধিকার রক্ষায় তাদের উদ্যোগের অভাব এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। ঔষধ প্রশাসন বিভাগের এ বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা আছে বলে মনেই হয় না। মশার উপদ্রব একটি দীর্ঘদিনের পুরনো নিয়মিত সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে এতকাল যাবত কোন কার্যকর ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়া কি আমাদের বা উন্নত বিশ^ কর্তৃক মশক নিধনের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া ? মানুষ ৮/৯ মাসের মধ্যে প্রানঘাতি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারল, অথচ মশার মত অতি নগন্য একটি পতঙ্গ ধ্বংসের মত কোন দাওয়াই তৈরি করতে পারল না। এটা এক চরম বিষ্ময়কর বিষয়। এটা আমাদের সবার জন্য একটি বড় ব্যর্থতা।
মশা মারার জন্য মানুষ সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করে থাকে। সিটি কর্পোরেশন মশা মারার জন্য যে ঔষধ ব্যবহার করছে তার কার্যকারিতা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এই পরীক্ষা কাজে যারা নিয়োজিত থাকবেন তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করছেন কিনা তাও পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, যারা মশা মারার ঔষধ তৈরী করে সে সব প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য সম্মত কার্যকর মশা মারার ঔষধ তৈরি করছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
এ কাজের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হবে। এর প্রতিষ্ঠানের সকল কাজের খবরদারীর দায়িত্ব থাকবে বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনের উপর। মশার দাপটে মানুষ অতিষ্ট। এখন সত্যিই সময় এসেছে মশা মারার জন্য কামান দাগার মত মোক্ষম কোন ঔষধ প্রয়োগের।
লেখক : সমাজকর্মী, কলাম লেখক