এবার কাঁচা চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের নতুন স্বপ্ন

21

এম এ হোসাইন

দুইবছর আগে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় বিপুল পরিমাণ চামড়ার জায়গা হয় সিটি করপোরেশনের ভাগাড়ে। চামড়াজাত পণ্যের কদর দিনদিন বাড়লেও ক্রমশ কমেছে কাঁচা চামড়ার দাম। এ অবস্থার মধ্যেও চামড়া নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। প্রক্রিয়াজাত কাঁচা চামড়া (ওয়েট ব্লু) রপ্তানির অনুমতিতে এ শিল্পে সুবাতাশের আবাসও মিলছে।
কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ লবণ। এবার লবণের কোনো সংকট নেই। চামড়া সংরক্ষণ ও গুদামজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় লবণ মজুদ রয়েছে আড়তদারদের কাছে। প্রয়োজনীয় শ্রমিকের যোগানও নিশ্চিত করছেন আড়তদাররা। লকডাউন শীতিল হওয়ায় চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা। মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণের পর কাঁচা চামড়ার সংগ্রহের বাকি কাজও শেষ করবেন আড়তদাররা। এরই মধ্যে ট্যানারি মালিকদের সাথে আড়তদারদের যোগাযোগ চলছে। পূর্বের বকেয়া পরিশোধে প্রতিশ্রæতিও মিলছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চামড়া সংগ্রহের জন্য সব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। লকডাউন খুললে ঢাকার ট্যানারিতে যোগাযোগ করা হবে। এখন আনুষঙ্গিক লবণ, লোকবল এসব প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করা হবে। সে অনুপাতে আমরা কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির জন্য সরকার পাঁচজনকে অনুমতি দিয়েছে। এককোটি ঘনফুট চামড়া তারা রপ্তানি করবে। এটা সরকারের ভাল সিদ্ধান্ত। এটি পাঁচজনের মধ্যে সীমাবন্ধ না করে উন্মুক্ত করে দিলে আরো ভাল হতো। ওয়েট বøু চামড়া বিক্রির সুবিধা হচ্ছে এটার টাকা কয়েকদিনের মধ্যে পাওয়া যায়। গতবছরের চামড়া বিক্রির টাকা তেমন বকেয়া নেই। তবে ২০১৫/১৬ সালের কিছু টাকা এখনো বকেয়া পড়ে আছে।
চামড়ার মূল উৎসই হলো কোরবানির ঈদ। মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। বিপুল চামড়া সংগ্রহের জন্য এ সময়ে নেওয়া হয় বাড়তি প্রস্তুতি। আগে থেকেই লবণ ও বাড়তি শ্রমিকের ব্যবস্থা করে প্রতিটি চামড়া ব্যবসায়ী। শুধু চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আড়তগুলোতে পাঁচহাজার বস্তা লবণ ও ২৫ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। ইতোমধ্যে চামড়া সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আড়তদাররা। চামড়া কেনার প্রস্তুতি থাকলেও কি দামে চামড়া কেনা-বেচা হবে সেটাতে স্থির হতে পারেননি আড়তদাররা। তবে অন্যান্য বছর ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকলেও এবার সেটার ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। ফলে এবার চামড়া কেনার জন্য আড়তদারদের আগ্রহ অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, যেহেতু আমরা চামড়ার ব্যবসা করি। তাই চামড়া কেনার জন্য আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে আমাদের ঢাকার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। ঢাকার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে আমাদের চামড়া কিনতে হয়। তিনি বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য আছে ১১২ জন। চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে ২৫০টির মতো আড়ত আছে। প্রতি একহাজার চামড়ার জন্য একশ বস্তা লবণের দরকার হয়। এ হিসাবে পাঁচলাখ চামড়ার জন্য প্রায় পাঁচহাজার বস্তা লবণ দরকার। আমাদের প্রর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। প্রত্যেক আড়তের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী লোকবলও মজুদ আছে। সব মিলিয়ে ২৫ হাজার মানুষ এখানে নিয়োজিত থাকে।
এদিকে সরকার বিশ্বের ৮টি দেশে ওয়েট ব্লু রফতানির অনুমতি দিয়েছে। ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি-১ অধিশাখার উপসচিব নাজনীন পারভীনের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে রফতানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হেমায়েতপুরের নিজ নিজ কারখানা থেকে সরাসরি হংকং, চীন, কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, ইতালি, স্পেন ও জার্মানি এই ৮ দেশে রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরীতে অবস্থিত আমিন ট্যানারি লিমিটেড, লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ লিমিটেড, মেসার্স কাদের লেদার কমপ্লেক্স এবং এএসকে ইনভেস্টমেন্ট ও কালাম ব্রাদার্স নামের পাঁচ শীর্ষ প্রতিষ্ঠানকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মোট এককোটি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দিয়ে এ চিঠি পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে চামড়ার ব্যবসা বিপর্যয় শুরু হয়। দাম কমতে কমতে গতবছর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া বহনের খরচ পর্যন্ত পায়নি। রেকর্ডসংখ্যক কোরবানি পশু জবাই হলেও ২০১৯ সালে দাম না পাওয়ায় রাস্তায় ফেলে নষ্ট করা হয় অনেক চামড়া। মোট চামড়ার ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। হঠাৎ চামড়ার বাজারে এমন ধসে দিশেহারা হয়ে পড়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাধ্য হয়ে রাস্তায় চামড়া ফেলে, নদীতে ভাসিয়ে ও মাটি চাপা দিয়ে ফেলে। জাতীয় সম্পদ এই চামড়া ফেলে দিয়ে নিরব প্রতিবাদ জানালেও এতে অনেক ব্যবসায়ীকে হারাতে হয়েছিল শেষ পুঁজিটুকুও।