এবার আসামির আইনজীবী রিমান্ডে

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

চুক্তিতে একজনের বদলে আরেকজনের সাজা খাটার মামলায় প্রকৃত আসামির আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজীকে জিজ্ঞাসাবাদে এক দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। বদলি কারাবাসের এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা জালিয়াতির মামলায় এ আইনজীবীকে গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিব রিমান্ডের নেওয়ার এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবু সাঈদ চৌধুরী ওই আইনজীবীকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কোতোয়ালী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মাহমুদুর রহমান রিমান্ডের বিষয়টি জানান।
গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকা থেকে শরীফ শাহরিয়ার সিরাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ মামলায় এর আগে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রকৃত আসামি যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত মামাতো ভাই বড় সোহাগ এবং তার হয়ে চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে যাবজ্জীবন কারাভোগকারী মো. হোসেনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
প্রায় ১১ বছর আগে হত্যাসহ দু’টি মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদÐপ্রাপ্ত সোহাগকে (৩৪) গত শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর গত রবিবার র‌্যাব জানায়, তার পরিবর্তে তিন বছর ধরে সোহাগ সেজে কারাগারে রয়েছেন আরেকজন। কারাগারে যিনি রয়েছেন তিনি সোহাগেরই ফুপাত ভাই মো. হোসেন (৩৫)। মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জেল খাটছেন তিনি।
আত্মসমর্পণের দুই-তিন মাসের মধ্যে নকল সোহাগকে কারাগার থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল আসল সোহাগ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কদমতলী এলাকায় হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ওই বছর গ্রেপ্তার সোহাগ ২০১৪ সালে জামিনে গিয়ে পলাতক হন। তিন বছর পর ছয় আসামির মধ্যে বড় সোহাগসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। ওই হত্যা মামলায় বড় সোহাগ ছাড়া মামুন (৩৩), ছোট সোহাগসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়। খবর বিডিনিউজের
সম্প্রতি সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর গত মঙ্গলবার ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পেশকার মিজানুর রহমান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একজনের বদলে আরেকজনের কারাবাসের ঘটনায় ওই দুইজন (প্রকৃত অভিযুক্ত ও তার বদলে কারাগারে যাওয়া ব্যক্তি) এবং দুই আইনজীবীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন।
বিচারক মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরী আবেদনটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে কোতয়ালী থানার পরিদর্শককে (তদন্ত) নির্দেশ দেন। চার আসামি হলেন- প্রকৃত সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, হোসেন (বড় সোহাগ নামে ভুয়া পরিচয়দানকারী), হত্যা মামলায় বড় সোহাগের জামিন আবেদনকারী ও ওকালতনামায় স্বাক্ষরকারী আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজী এবং আরেক আইনজীবী মো. ইব্রাহীম হোসেন।
তাদের বিরুদ্ধে জাল কাগজ তৈরি, ভুয়া পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি সাজানোর অভিযোগ আনা হয়।
আইনজীবী শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আত্মসমর্পন করা আসামি প্রকৃত আসামি নন জেনেও তাকে মিথ্যা ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকৃত আসামি সাজিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নথি উপস্থাপনের দরখাস্ত, জামিনের দরখাস্ত ও ওকালতনামায় জাল দরখাস্ত দিয়ে তা সঠিক বলে দাবি করেন।
প্রতারণার আশ্রয়ে আদালতে আত্মসমর্পন করিয়ে একজনের সাজা অন্যজন দিয়ে খাটিয়ে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।