এনআইডি, সহিংসতা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

17

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনার জন্য কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টিকরণ চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপে’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনআইডি আগে ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে। আগে যারা ভোটার তাদেরই এনআইডি দেওয়া হতো। সারাবিশ্বে জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এনআইডির আওতায় থাকে। আমাদের নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের পর থেকে এনআইডি দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য বয়স থেকে এনআইডি চালু করতে পরিকল্পনা নিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার ব্যাপারে কিছু আইনি জটিলতা আছে। সেটা দেখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ফাইল। আইন মন্ত্রণালয় আইনগত দিক যাচাই-বাছাই করে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স, সে নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি। খবর বিডি/বাংলানিউজের।
এনআইডির কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কবে থেকে শুরু করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কথাটা আমি বলেছি। এনআইডিতে আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। সেটার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ক্লিয়ারেন্স বা স্পষ্টিকরণ চেয়েছি। কারণ আইনে ধারা, উপধারা সংশোধন করতে হবে কিনা? তা জানার জন্য। এজন্যই স্পষ্টকরণের ব্যাপারটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মতামত দিলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাবো।
সাম্প্রতিক পূজামন্ডপে হামলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিগগির সহিংসতায় ইন্ধনদাতাদের নাম প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, কুমিল্লায় পূজামন্ডপে সহিংসতার ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে। যেখানে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে।
মন্ত্রী বলেন, ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা ইন্ধনদাতাদের নাম জানিয়েছেন। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাদের নাম আপনাদের সামনে প্রকাশ করবো। সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে কি না সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। আমরা নিশ্চিত হয়েই আপনাদের জানাতে চাই। গ্রেপ্তারদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে, শিগগির সেই ইন্ধনদাতাদের নাম প্রকাশ করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই বলে এসেছি যে, এর পেছনে কোনো চক্রান্ত রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো লোক এ কাজ করতে পারে না।
নোয়াখালীতে হামলার ঘটনায় কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং অনেকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে যেসব নাম এসেছে তাদের প্রায় সবাইকে আপনারা চেনেন। খবর বার্তা সংস্থার।
দুর্গাপূজার অষ্টমীতে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার একটি মন্ডপে ‘কোরআন অবমাননার’ কথিত অভিযোগ তুলে সহিংসতা শুরুর পর তা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, ফেনী, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
এর মধ্যে ১৫ অক্টোবর দশমীর দিন নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কয়েকটি মন্দির ও মÐপে দফায় দফায় হামলা-ভাঙচুর হয়। ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া জেলেপল্লীর ২৯টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
নোয়াখালীর ঘটনায় গ্রেপ্তার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা ইতোমধ্যে আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে ‘বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য’ এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, কুমিল্লার ঘটনায়ও সেরকম নাম আসছে আর রংপুরেও একই। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আপনাদের সামনে নাম প্রকাশ করব।
চাঁদপুর ও রংপুরের সহিংসতায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নামও এসেছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখা হয়, এখানে রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে কামাল বলেন, তিনি বলে গেছেন এদেশ সবার, এদেশে ধর্ম নিয়ে বৈষম্য হবে না।
এদেশ হবে ধর্ম নিরপেক্ষ। আমরা সে আদর্শই ধারণ করে চলেছি। আমি দেখেছি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন।
পূজামÐপে ‘কে বা কারা’ কোরআন শরীফ রেখে দিয়ে সহিংস ঘটনার মাধ্যমে একটা ‘বিব্রতকর এবং উত্তেজনাকর’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আমরা শুরুতেই ধরে নিয়েছিলাম যে কোরআন শরীফ রেখে দিয়েছে, কোনো এক জায়গা থেকে এসেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমাদের পুলিশের সকল পর্যায়ের টিম সেখানে পাঠিয়েছিলাম, যাতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হয়।
নোয়াখালীর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের ধারণা ছিল জুমার নামাজের পর অসুবিধা হতে পারে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলেছিলাম তার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্য এবং তারা তা করেছেন।
আমাদের নামাজও ঠিকভাবে শেষ হল। কিন্তু দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে, এক পক্ষ পুলিশের সামনে হৈ-হল্লা শুরু করল। আরেকপক্ষ পুলিশকে ব্যস্ত রেখে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু করল।
পরবর্তীতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও সেখানে বেশ কিছু ভাঙচুর হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় পুকুরে ঝাঁপ দেওয়ায় একজন মারা গেছেন।
দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহিংসতার মাধ্যমে একটি মহল ‘সুপরিকল্পিতভাবে’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে মাল্টি ইন্টারেস্ট কাজ করে। মাদক ছাড়াও ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া যারা তাদেরকে (রোহিঙ্গা) জোর করে এদেশে পাঠিয়েছে, তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারিদিকে বেড়া তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে এবং বেড়া তৈরি শেষ হলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
এ সময় সংগঠনের যুগ্ন সম্পাদক আজাদ মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিইল্লাহ সুমন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, শাহজাহান মোল্লা, হাসিফ মাহমুদ শাহ, শাহাদাত হোসেন রাকিব উপস্থিত ছিলেন।