এনআইডির ভুল সংশোধনের ভোগান্তি সহজ সমাধান চাই

33

 

জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড দৈনন্দিন জীবনে এখন একটি অপরিহার্য বিষয়। বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক ১৮ বছর পূর্ণ হলেই এ পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকার রাখে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এনআইডি বিভাগ নাগরিকদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য যদিও ছিল নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি। পরবর্তীকালে চাকরি, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পাসপোর্ট তৈরি, ব্যাংক হিসাব খোলা, মোবাইল সিম কার্ড কেনা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কাজেই এখন জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। স্বাভাবিকভাবে আশা করা গিয়েছিল, পরিচয়পত্রটি নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হবে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সেবার অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়সারা কাজ করেন, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা জানি, প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র চালু হওয়ার সময় শুধু কার্ডধারীর নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্মতারিখ, আইডি নম্বর, ছবি ও স্বাক্ষর উল্লেখ ছিল। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ২০১৬ সালে দেওয়া স্মার্ট কার্ডে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কার্ড (আইসিসি) সংযুক্ত করা হয়, যা চিপ কার্ড নামেও পরিচিত। স্মার্ট কার্ডে এ চিপ কার্ড মেশিনের সাহায্যে রিড করা যায়। এই স্মার্ট কার্ডে নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে। সাধারণ পরিচয়পত্র থেকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর হলেও কার্ডে আগে যেরকম ভুল তথ্য এবং বিকৃত ছবি লক্ষ করা গেছে, এখনও তাই।
নাগরিক জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এনআইডি কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এধরনের ভুলের কারণে অনেকের চাকরি হচ্ছে না, বেতন পাচ্ছেন না, পাসপোর্ট করতে পারছেনা, বিয়ে-শাদিতে কাবিননামা করতে পারছেনা, কেউবা ব্যাংকের নিয়মে আটকে টাকাও উত্তোলন করতে পারছেন না। পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় অনেক হতদরিদ্র ভিজিএফসহ বিভিন্ন ত্রাণ নিতে পারছেন না। এ রকম অসংখ্য সমস্যায় সম্মুখীন সাধারণ মানুষ। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, আইডি কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য জেলা বা উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন করার পর কয়েকমাস অপেক্ষা করে সঠিক এনআইডি কার্ড মেলা ভার। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ভুলের জন্য ইসির কর্মীরাই দায়ি। তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কার্ডেও তথ্য সংশোধনের জন্য গুনতে হচ্ছে টাকা। ব্যয় করতে হচ্ছে সময়, সঙ্গে থাকে মানসিক ছাপ। এমন অবস্থার জন্য দায়ি কে? কার্ড সংশ্লিষ্ট বিভাগে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ কর্মীও তাদের দায়িত্বহীন কর্মকাÐ। যখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন ইসির অদক্ষ কর্মীরা তথ্য সংরক্ষণে যে ভুল করেছেন তারই কারণে আজকে নাগরিকদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা জানি, ভোগান্তি দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রণে উপজেলা অফিস, জেলা অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের (এনআইডি) কার কী ক্ষমতা তাও নির্ধারিত করা হয় প্রজ্ঞাপনে। তারপরও বিড়ম্বনা কমছেই না। এর জন্য অবশ্যই নাগরিকরাও দায়ি কম নয়। জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রতিবারই তথ্য সংগ্রহের সময় উভয়পক্ষের গাফিলতির কারণে তথ্যের গরমিল থাকছে। এসব ক্ষেত্রে নামের বানান, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নামের বানান নির্ভুল করা যায়নি।
মাঠপর্যায়ের অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করে ভোটার তথ্য সংগ্রহ ফরমে পিতা-মাতার নাম ও বর্তমান ঠিকানা ভুল করা এবং আইডি নম্বরের ঘর খালি রাখা, শনাক্তকারীর স্বাক্ষর না থাকা, সুপারভাইজার ও যাচাইকারীর নাম ও স্বাক্ষর না থাকা, আঙুলের অস্পষ্ট ছাপ, ইংরেজি ও বাংলা বানানে অসামঞ্জস্যসহ ২১টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। দায়ি মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে অনেক নাগরিকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে এনআইডিতে। তারা রাষ্ট্রীয় সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। আমরা মনে করি, ভুলত্রুটি সংশোধনে সহজ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। ভুল সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও যাবতীয় কারিগরি সহায়তা স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসকেই দিতে হবে। এতে আশা করা যায, সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।