এতিমদের সাথে প্রতিদিন ইফতার শিল্প পরিবারের

42

নিজম্ব প্রতিবেদক

বংশ পরম্পরায় এতিম-অসহায়দের সাথে রোজাজুড়ে ইফতার করে আসছে চট্টগ্রামের ধনাঢ্য এক শিল্প পরিবার। মোস্তফা হাকিম গ্রুপের কর্ণধার সাবেক মেয়র মনজুর আলমের পরিবার এই রেওয়াজ ধরে রেখেছে। পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে রমজানে প্রতিদিন অসহায়দের সাথে ইফতার করেন মনজুর আলম। পাঁচ সন্তানকে সাথে নিয়ে এই ইফতার আয়োজনে শরিক হন নাতিরাও। ঐতিহ্যগতভাবে পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যরা অসহায়দের সাথে ইফতারে অংশ নেন মনজুর আলমের বাড়িতে।
রোজা আসলেই ইফতারসামগ্রী, নতুন পোশাক সামগ্রীসহ রোজাদার ও গরীব মানুষের জন্য দু’হাত প্রসারিত করে নেমে পড়েন মনজুর আলম। নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ছাড়াও সীতাকুন্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। শত ব্যস্ততার মাঝেও এ মানুষটি ইফতার সময়ে নিজ বাড়িতেই হাজির হন। শুধু তিনি নন, তার পুরো পরিবারের সকল সদস্য ইফতারের সময় বাড়িতেই থাকেন। সবাই একই কাতারে বসে ইফতার করেন। খুবই জরুরি প্রয়োজন না হলে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে না। আর এ নিয়মটা চালু হয় মনজুর আলমের পিতা আবদুল হাকিম মাইজভান্ডারীর সময় থেকেই। যা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রেখেছেন মনজুর আলমের পরিবার। মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘আমার মরহুম পিতা সবাইকে সাথে নিয়ে ইফতার করতেন। তখন এতোটা বড় করে হতো না। আমি নিয়মটা চালু রেখেছি। আমি কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় বড় আকারে ইফতার আয়োজন শুরু করেছি। ধনী-গরীব বিভেদ ভুলে সবাই একই সাথে ইফতার করি। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় আমার সামান্য এ আয়োজন। আমার পাঁচ সন্তান ও নাতিরা এ ইফতারে অংশ নেয়। সবাই একই ছাদের নিচে থাকায় সে সুযোগটা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কোরআন খতম হয়, তালিকাভুক্ত বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা আসেন। তাদের ঈদের পোশাক, সেলামী দিই। ইফতারের পর ডিনারের প্যাকেট দিই। আমার পরিবারের সবাই এসব কাজে সন্তুষ্ট। সবাই কাজগুলো দেখাশুনা করে।’
একেক দিন একেক মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে আসা হয় মনজুর আলমের বাড়ি এইচএম ভবনে। নিজস্ব দুটি গাড়ির মাধ্যমে আনা হয় ছাত্রদের। এসব ছাত্ররা শিক্ষকদের তত্ত¡াবধানে কোরআন খতমে অংশ নেন। আছর নামাজের পর থেকে বাড়ির মূল ফটক খুলে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে আসা শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। বিশাল জায়গার মিলনায়তনে টেবিলে বসে পড়েন সবাই। সেখানে এতিম শিশু থেকে ভিক্ষুক এমনকি স্বনামধন্য মানুষও মিলিত হন। যথানিয়মে উপস্থিত থাকেন মনজুর আলমের পাঁচ সন্তান যথাক্রমে মো. নিজামুল আলম, মো. সরোয়ার আলম, মো. ফারুক আজম, মো. সাইফুল আলম ও মো. সাহিদুল আলম। নিজেরা ইফতারির প্লেট বাড়িয়ে দেন আগত মেহমানদের হাতে। মনজুর আলম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ইফতারি বিতরণ পর্যন্ত সবকিছু মনিটরিং করেন।
মনজুর আলমের মেঝ ছেলে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, এতিম ও অসহায়দের সাথে ইফতার করা এটি আমাদের পরিবারের একটি ঐতিহ্য এবং পুরনো রেওয়াজ। আমার মরহুম দাদা আবদুল হাকিম মাইজভাÐারী নিয়মিত সবাইকে নিয়ে ইফতার করতেন। আমার বাবাও এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। আশা করি যুগ যুগ ধরে আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারবো। পরিবারের পক্ষ থেকে রোজাদারদের ইফতার করানো ছাড়াও ৪১ ওয়ার্ডে ইফতার ও সেহেরী সামগ্রী বিতরণ, ঈদ পোশাক বিতরণ এসব কাজ ধারাবাহিতভাবে করা হয়। মনজুর আলমের এইচএম ভবনে ইফতার আয়োজন শুরু হয় বিকেল থেকেই। বারান্দায় মানুষজনের আসা শুরু হওয়ায় পুরাতন বাড়ি থেকে এইচএম ভবনে আসেন মনজুর আলম। উপস্থিত সবার সাথে বসে কথা বলেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে খবর নেন, ইফতার আয়োজনের। এমনকি রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন ইফতারী তৈরির পরিবেশ, দেন নানা নির্দেশনাও।
ইফতারের আধঘণ্টা আগে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল। মিলাদ ও মুনাজাত শেষে সবাই একসাথে ইফতারিতে অংশ নেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের আইটেম যুক্ত করেন ইফতারিতে। আজোয়া খেজুর, শরবত, হালিম, ছোলা, বেগুনি, পিঁয়াজু, দই ছিড়া থেকে শুরু করে ১২ থেকে ১৪টি পদের ইফতারী দিয়ে সাজানো হয় প্লেট। আমন্ত্রিত মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য ঈদ
পোশাক, উপহার ও ডিনারের ব্যবস্থাও রাখা হয়।
এইচএম ভবনে ইফতারে অংশ নেয়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অনেকগুলো আইটেম দিয়ে ইফতার করলাম। এতো বেশি পরিমাণে ইফতারি দিল, খেয়ে শেষ করতে পারলাম না। মনজুর আলম সাহেব খুবই ভালো মানুষ। একটা শিল্প পরিবারের সকলে এভাবে ইফতারে অংশ নেয়া কল্পনার মতো। তাছাড়া ওনাদের আতিথেয়তাও প্রশংসাযোগ্য।