এডমিশন টেস্টের সাথে এবার ডোপ টেস্ট

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে মাদকাসক্তি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মাদক আসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ডোপ করার জন্য আইন তৈরির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ওই আইনের মধ্যেই থাকবে যে, ভর্তির সময় মেডিকেল টেস্ট করা হবে, যেখানে ডোপ টেস্টও যুক্ত হবে।
গতকাল রবিবার ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা জানিয়েছেন। সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গাড়ি চালকদেরকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনে বিআরটিএ।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীতে ডোপ টেস্ট আগেই শুরু করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারাই নিয়োগ পাবেন, তাদের যেন ডোপ টেস্ট করা হয় এবং সিভিল সার্জন যে টেস্ট করেন, সেখানে যেন এই ডোপ টেস্ট যুক্ত করা হয়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেটিও চলে এসেছে।এটিও করা হচ্ছে। তবে এটি ব্যাপকভাবে করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। সেই প্রচেষ্টাও শুরু করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে পুলিশ বাহিনী ও বিআরটিএ লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু রয়েছে। ২০২১ সালে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবা বড়ি, হেরোইন, গাঁজাগাছ, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করে ২১ হাজার ৯৯২ জনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার ৫৯২টি মামলা করা হয়েছে। চট্টগ্রামেও বিআরটিএ লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ডোপ টেস্ট করা হয়। তার মধ্যে- এমফিটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ সংশ্লিষ্ট মাদকের উপস্থিতি আছে কি না, বেঞ্জোডায়াজেপিন বা মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রক ওষুধ আছে কি না, অপিয়েট বা আফিমের উপস্থিতি আছে কি না, ক্যানবিনয়েডস বা মদ, গাঁজা, বিয়ার, ক্যাফেইনের উপস্থিতি আছে কি না এবং এ্যালকোহল বা ইথানলের উপস্থিতি আছে কি না।
ক্যানবিনয়েডস সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. শহিদুল আলম বলেন, ক্যানবিনয়েড মূলত গাঁজা ও মদের অংশ বিশেষ। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় গাঁজা (মারিজুয়ানা), মদ, কফি, বিয়ার ইত্যাদি। যা একবার সেবনের ফলে মানুষের শরীরে চার সপ্তাহ কাজ করে। এটি শরীর থেকে নিঃসরণ হতেও চার সপ্তাহের বেশি সময় লাগে। তাই কোনো মানুষ এটি সেবন করার চার সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত পুনরায় সেবন বন্ধ রাখতে হবে। তারপর ওই ব্যক্তির রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে।
চট্টগ্রাম বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে ৮ হাজার ৩২৮টি আবেদন ইস্যূ হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোর ৪ হাজার ৬৪৮টি এবং জেলার ৩ হাজার ৬৮০টি। এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ হাজার ৫১২ জনের রিপোর্ট বিআরটিএ কার্যালয়ে ইতোমধ্যে চলে আসে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোর ১ হাজার ৩৭৬টি এবং জেলার ১ হাজার ১৩৬টি। রিপোর্টে পজিটিভ আসা প্রার্থীরা লাইসেন্স পাবেন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চবির সাবেক উপাচার্য ও অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, মাদক একটি সামাজিক অভিশাপ। যুব সমাজকে ধ্বংস করার অন্যতম হাতিয়ার। মাদকের রাহুগ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে দরকার সামাজিক সচেতনতা। এই সচেতনতা পরিবার থেকে তৈরি হওয়া দরকার। অন্যদিকে, একটি দেশের গতি-প্রকৃতিকে স্বাভাবিক ধারায় প্রবাহিত করার লক্ষ্যে উদ্যমী-কর্মঠ-দক্ষ-যোগ্য কর্মবীরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দক্ষ কর্মবীর তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। আমি মনেকরি সরকারের এই উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শ-উদ্যমী কর্মবীর সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখবে।