এটা আমাদের ‘সম্মিলিত ব্যর্থতা’

29

দুই বছরে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে না পারাকে সবার ‘সম্মিলিত ব্যর্থতা’ হিসেবে বর্ণনা করলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো।
গতকাল বুধবার ঢাকায় ‘ডিক্যাব টক’-এ তিনি বলেন, আমার মতে এটা স্বীকার করতে হবে যে, মিয়ানমারকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা রয়েছে। এই ব্যর্থতা শুধু জাতিসংঘের নয়, আরও অনেকের।
ঢাকার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের প্রতিনিধির সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি রাহীদ এজাজ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
বক্তব্যে বাংলাদেশে জাতিসংঘ পরিচালিত সব ধরনের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন মিয়া সেপ্পো। তবে প্রশ্নোত্তরে গুরুত্ব পায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ। খবর বিডিনিউজের
বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এদের সাড়ে সাত লাখই এসেছে ২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমার সরকার এখনও রাখাইনে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না করায় তা সফল হয়নি। নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরতে চায় তারা।
রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে এর সমাধানে জটিলতার দিকগুলো তুলে ধরেন মিয়া সেপ্পো।
সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারে রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর সমাধান আসবে বিভিন্ন দিক থেকে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে।
মিয়া সেপ্পো বলেন, এই সংকটের দিকে অব্যাহত নজর ধরে রাখা এবং এটা নিয়ে আলোচনায় সদস্য দেশগুলোকে এক জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছে জাতিসংঘ।
এখন সংকট নিরসনের পথ হিসেবে দুটি দিকের ওপর গুরুত্ব দেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি।
প্রথমত, আমাদের সামনে যেসব প্রশ্ন আছে সেগুলোর সমাধান কোনো একটি বিষয় দিয়ে হবে না। আমরা একসঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি, সেগুলো জটিল ও পরস্পর সম্পর্কিত। অবশ্যই, প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি।
তার আগ পর্যন্ত শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর যে প্রভাব পড়ছে সেদিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি এই রোহিঙ্গাদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
তার মতে, দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে সমাধানের ‘স্থায়িত্ব’। স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু ঠিকমতো হতে হবে।
আমরা আজকে যে কাজগুলো করছি সেগুলো যেন আগামীকালের সম্ভাব্য পদক্ষেপের মঞ্চ তৈরি করে, তার জন্য সময় লাগবে এবং সযত্ন বিবেচনা থাকতে হবে। সীমান্তের উভয় পাশেই জাতিসংঘের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সত্য।
রাখাইন প্রদেশে অবস্থার উন্নয়নে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি তার উপায় বের করতে হবে এবং তা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষকে, তারা যেখানেই থাক না কেন, তাদের বাকি জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে যা কিছু করতে পারি সেই প্রচেষ্টার মধ্যেই করতে হবে।