এখনও জমজমাট মহিউদ্দিন চৌধুরীর ইফতার আয়োজন

71

প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নানা সামাজিক কাজের মধ্যে একটি ছিলো সবার সাথে বসে ইফতার করা। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকে সেই ইফতার আয়োজন আরও বড় পরিসরে জমিয়েছিলেন জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। হোসেন বাবুর্চির রান্না করা নানা পদের ইফতার সামগ্রী দিয়ে দুই হাজারেরও বেশি রোজাদারকে নিয়মিত ইফতার করাতেন তিনি। মহিউদ্দিন চৌধুরী না থাকলেও আজও জৌলুস হারায়নি সেই ইফতার আয়োজন।
ছোলা, চপ, পেঁয়াজু, খেঁজুর, চিড়া, শরবত, হালিম, ফিরনি ইত্যাদি নিজ হাতে তৈরি করে ইফতারি সাজান হোসেন বাবুর্চি। তার সাথে আছেন কয়েকজন সহযোগী। মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকাকালে যেভাবে ইফতার হতো, সে আদলেই সব আয়োজন অব্যাহত রাখা হয়েছে। শুধু আয়োজকের জায়গায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামের পর যুক্ত হয়েছে ‘ফাউন্ডেশন’ শব্দটি। বাকি সবকিছুই আগের মতোই আছে। প্রতিদিন ইফতারের আগ পর্যন্ত হয় ‘রমজানের গুরুত্ব ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা।
জীবদ্দশায় মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজের উদ্যোগেই ইফতার আয়োজন করতেন। দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের জন্যে প্রতিদিন ইফতারি তৈরি করা হয়। সাধারণত শ্রমজীবী গরিব মেহনতি মানুষই এই আয়োজনে শামিল হন। পুরো রমজানজুড়ে অব্যাহত রাখা হয় এই আয়োজন। রমজানের শুরু থেকেই বিপুল মানুষ সাড়া দেয় এই আয়োজনে। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় এই আয়োজনে অনেক বড় বড় নেতারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও সেটা এখন নেই বললেই চলে।
ইফতার আয়োজনে সামিল হওয়া নুরুল কবির নামের এক রোজাদার বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি মানুষকে খাইয়ে আনন্দ পেতেন। তার আন্তরিকতার অভাব ছিলো না। তার আন্তরিকতার কারণেই আমরা এই ইফতার আয়োজনে সামিল হই। আগে তার ইফতার আয়োজনে অনেক বড় বড় নেতারা নিয়মিত আসতেন। এখন মানুষজন বেশি হলেও অতিথিদের তেমন দেখা মেলে না।
আসরের নামাজের পর থেকেই ইফতার আয়োজনে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ে রোজাদার মানুষের সংখ্যা। ইফতারি সামনে নিয়ে সবাই সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েন। ধনী-গরিব সকল শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে বসে শোনেন হুজুরের বয়ান। শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠজুড়ে থাকেন বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবক। তারা প্রত্যেকের কাছে ইফতারি বিতরণ করেন।
ইফতার করতে আসা তানভির হাসান বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকার সময় থেকেই এখানে আসতাম। মহিউদ্দিন চৌধুরী মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসতেন। তার টানেই এবারও এসেছি ইফতার করতে। ভালো লাগছে, মহিউদ্দীন চৌধুরী বেঁচে না থাকলেও এই ইফতার আয়োজন আগের মতই আছে।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজনের সূচনা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেই আয়োজনে দাওয়াত দেওয়া হতো চট্টগ্রামের রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিশিষ্টজনদের। তবে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দীন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর এই আয়োজন অব্যাহত রয়েছে।