এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন যথাযথ কার্যকর হলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হবে

20

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ এপ্রিল হতে আগামী এক সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক জরুরি লকডাউন পালন করানোর। জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি বেসরকারি অফিস, কলকারখানাসহ সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করছে সরকার। অপরপক্ষে দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। দেশে করোনা সংক্রমণ যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মনে হয় এক সপ্তাহের লকডাউনে কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রিত হবে না। সরকার যে রকম সিদ্ধান্ত নিক না কেন তা যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো বিগত এক বছরে করোনার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ খুবই দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। কাজ না করে ঘরে বসে থাকার মতো অবস্থা দেশের অধিকাংশ মানুষের নেই। আর্থিক টানাটানির মধ্যে এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন ঘরে বসে লকডাউন পালন করার সামর্থ স্বল্প আয়ের মানুষের নেই। এমতাবস্থায় সামনে উপস্থিত রমজান মাস। রমজান মাসে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অতিরিক্ত খরচ থাকে। অন্যদিকে বাজারে রমজান উপস্থিত হওয়ার মাসখানিক আগ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। চাল, তেল, ডালসহ প্রায় দ্রব্যের দাম কেজি প্রতি দ্বিগুণের কাছাকাছি বেড়ে গেছে। অথচ বেতন আগের অবস্থায় রয়ে গেছে। তাছাড়া সরকার সরকারি বেসরকারি অফিস, কলকারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছে কিন্তু চাকরিজীবীদের বেতন দেয়ার কথা বলেননি। এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন ঘরে বসে চাকরীজীবীরা কি খেয়ে বাঁচবে তাঁর নিশ্চয়তা বিধান না করে লকডাউন কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তা আমাদের বুঝে আসেনা। পত্র-পত্রিকা, গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কলকারখানার কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কর্মচারীদের অন্ততঃ বেতন প্রদানের নির্দেশনা ছাড়া কর্মস্থল বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে থাকার নির্দেশনা, শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অনাহারে মৃত্যুবরণের নির্দেশনার সামিল।
সরকারি নির্দেশনা ছাড়া বেসরকারি কর্তৃপক্ষসমূহ তাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করবে বলে মনে হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউনকালীন সময়ে ঘরে বসে জীবন যাপনের আর্থিক নিশ্চয়তা বিধানে সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে তাদের কর্মচারীদের বেতন প্রদানের নির্দেশনা দেয়া জরুরি। তাছাড়া যারা দিনমজুর তাদের খাদ্যদ্রব্য সহায়তা প্রদানও প্রয়োজন। বিগত লকডাউনের সময় সরকারি সাহায্য যেভাবে প্রদান করা হয়েছে সেভাবে প্রদান করলে হবে না। সরকারি যেকোন সহায়তা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। জনগণের প্রয়োজনীয় এবং খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের পর অন্তত ১৫ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হলে তা কার্যকর হবে এবং দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত জনগণের পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই সরকার পরিকল্পিতভাবে দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশে একটি সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিক এমন আশা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের।