এক সপ্তাহে মূল্য বেড়েছে প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের

32

মনিরুল ইসলাম মুন্না

করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে না উঠতেই সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও প্রায় সবধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দামের এ উর্ধ্বমুখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য এটি চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল বুধবার নগরীর খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়।
রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে জানা গেছে, খুচরা দরে গত সপ্তাহে চিনি কেজি ৭৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, মোটা মশুর কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা, চিকন মশুর কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা, পেঁয়াজ কেজিতে ৩৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, রসুন কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, আদা কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা, মোটা মিষ্টি মরিচ কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, চিকন ঝাল মরিচ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২৩০ টাকা, দারচিনি ২০ টাকা বেড়ে কেজি ৪০০ টাকা, এলাচি কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ধনে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা, জিরা ২০ টাকা বেড়ে কেজি ৪০০ টাকা, লবণ মানভেদে কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ছোলা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকা, সয়াবিন তেল বোতলজাত লিটার ১৬০ টাকা, পাম তেল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং সুপার পাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে খুচরা চালের বাজারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত একমাস ধরে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কাটারি আতপ বস্তা (৫০ কেজি) ৩ হাজার ১০০ টাকা, বেতি আতপ বস্তা ২ হাজার ৫০০ টাকা, মিনিকেট আতপ বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা। একই সাথে নবান্ন ও জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তা তিন হাজার টাকা এবং কাটারি সিদ্ধ বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে জানা গেছে, চিনি কেজি ৭৬ দশমিক ৫০ টাকা, মোটা মশুর ৮৫ টাকা, চিকন মশুর মানভেদে ৯৫ থেকে ১০২ টাকা কেজি, ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ৫৬ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫৪ টাকা, রসুন ও আদা কেজি ৯০ টাকা, মোটা মিষ্টি মরিচ কেজি ১৭৫ টাকা, চিকন ঝাল মরিচ কেজি ২১০ টাকা, দারচিনি কেজি ৩০৫ টাকা, এলাচি মানভেদে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা, ধনিয়া কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, জিরা কেজি ২৭৫ টাকা, ছোলা কেজি ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল লিটার ১৫০ টাকা, পাম তেল লিটার ১৩১ টাকা এবং সুপার পাম লিটার ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের সোবহান স্টোরের স্বত্বাধিকারি মো. শোয়াইব বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কিছু পণ্যের দাম পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরাতেও বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। কিন্তু আমরা নতুন পণ্য না আনা পর্যন্ত দাম বাড়াই না। আগে যে দরে কিনেছি তার থেকে সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করছি।
তেল-চিনির বিষয়ে খাতুনগঞ্জের পিএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারি এমদাদুল হক রায়হান বলেন, ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন, সুপার পাম ও পাম তেলের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। তেমনই বেড়েছে মণপ্রতি চিনির দামও। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেইট বেশি থাকায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বুকিং কমলে দাম কমে আসবে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে ক্রেতা কম থাকা স্বত্ত্বেও দাম বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম বেঁধে দিলেও পুরো বাজার কিছু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ বিষয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, বাজারে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। আমরা প্রতিদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে থাকি। কিন্তু ক্রেতা নেই। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বেড়েই চলেছে। দাম বাড়ানোর নেপথ্যে কারা কাজ করছে তা দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিত। তা নাহলে দাম বাড়তেই থাকবে, কখনো কমবে না।