এক যুগে মোবাইল ব্যাংকিং

22

মোবাইল ব্যাংকিং সেবার এক যুগ হতে চলেছে। ব্যাংকে না গিয়েও মোবাইলে এক নিমেষেই টাকা লেনদেন সেবা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। কিছুদিন পরেই দেশের আর্থিক সেবায় বড় বিপ্লব ঘটানো এই সেবার ১২ বছর পূর্ণ হবে। এখন প্রতি মাসে লাখ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকে যখন দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়, এই ফোনই যে একসময় অনেক আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে, এমন পূর্বাভাসও তখন কেউ দেয়নি। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন যতো যাচ্ছে ততোই এই সেবার উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেন।
একক মাসের হিসাবে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যা এই সেবা চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে লাখ কোটি টাকার বেশি, এক লাখ সাত হাজার ৪৬০ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
নভেম্বর মাসে এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, উত্তোলন, বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে লেনদেন হয় ৯২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে লেনদেন চার হাজার সাত কোটি টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। গত বছরের ছয় মাসের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, আগস্টে ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি এবং অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধিত গ্রাহক বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে নিবন্ধিত হিসাব ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। নভেম্বরে যা ছিল ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৬টি। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ২৫ লাখ ৩ হাজার ৮৩৭টি।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে এখন দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।