এক যুগেও চালু হয়নি ফটিকছড়ির নিশ্চিন্তাপুর হালদা সেচ প্রকল্প

93

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রোসাংগিরীর নিশ্চিন্তাপুর হালদা সেচ প্রকল্প এক যুগেও চালু হয়নি। প্রকল্পটি চালু হলে গ্রীষ্মে চৌচির হয়ে যাওয়া রোসাংগিরী, সমিতিরহাট, নানুপুর ও নিশ্চিন্তাপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের শত শত একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। অন্যদিকে বর্ষায় তলিয়ে যাওয়া আবাদি জমিসহ বসতবাড়ি রক্ষা হবে। প্রকল্পটি দ্রæত চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্প নামে সমন্বিত একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। পৌনে ৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার নতুন খাল খনন ও সড়ক পাকা করা হয়। খালের ওপর নির্মিত হয় তিনটি কালভার্ট। নির্মাণ করা হয় ৬টি পাম্পের হাউস ও হালদা থেকে পানি উত্তোলনের পাইপ লাইন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ওই বছরের জানুয়ারির দিকে নকশায় ত্রুটির কথা জানিয়ে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রোসাংগিরীর নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ ও বেশিরভাগ অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিন ধাপে এসব কাজ করার পর এক পর্যায়ে প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। নকশাগত ত্রুটি ধরা পড়ার পর নতুন নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা করা হয়। বরাদ্দ বাড়লেও রহস্যজনক কারণে প্রকল্পের বাকি কাজ আর শেষ করা হয়নি।
গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ নোমান হাবিব বলেন, প্রকল্পের ওপর ভরসা করে অনেক দিন ধরে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় গত এক যুগে কোন মৌসুমেই সেচ সম্ভব হয়নি। ফলে এখানে ধান-সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকদের দাবির মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন মাঝে-মধ্যে এটি দেখতে আসেন।
রোসাংগিরী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম তালুকদার বলেন, প্রকল্পটির কাজ দ্রুত করতে আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আন্তরিকতার অভাবে তা হয়নি।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হালদা নদী থেকে রোসাংগিরী, নানুপুর, নিশ্চিন্তাপুর, সমিতিরহাট ইউনিয়ন পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের যে খাল পাকা করা হয়েছে সেগুলো এখন ভেঙে পড়ছে। স্থানীয় লোকজন ইটগুলো চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পাইপগুলো নষ্ট হচ্ছে। আর পাম্প হাউসটি পরিণত হয়েছে অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ আস্তানা এবং গোচারণ ভূমিতে। সেখানেও এখন ভবনের আস্তরন খসে পড়ছে।
রোসাংগিরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শোয়েব আল সালেহীন বলেন, ‘নিশ্চিন্তাপুর সেচ প্রকল্পটি এখন কৃষকদের গলার কাঁটা। পাউবোর ভুল পরিকল্পনার কারণে সরকারি অর্থের যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাউবোকে এর দায় নিয়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে হবে।
প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, এসব এলাকায় শুকনো মৌসুমে দুই হাজার একরের মতো ইরি-বোরো চাষযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। প্রকল্পটি চালু হলে এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আসত। তিনি কৃষকের স্বার্থে প্রকল্পটি দ্রুত চালু করার দাবি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, প্রকল্প বরাদ্দের বড় একটি অংশ খরচ করা হয়েছে। অবকাঠামোর কাজও অনেকটা শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে প্রকল্প তৈরি করে প্রকল্পটির বাকি কাজ করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। প্রকল্প হলে তবেই কাজ আবার শুরু করা যাবে।