এক মাস ধরে কলকাতায় আটকা ১৫ নাবিক

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

কলকাতা বন্দরে কাত হয়ে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশি জাহাজের ১৫ নাবিক এক মাসের বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছেন সেখানকার একটি হোস্টেলে। কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর কর্তৃপক্ষ (সাবেক কলকাতা বন্দর) এবং জাহাজটির বাংলদেশি মালিকপক্ষের ‘উদাসীনতায়’ এতদিন ধরে সেখানে আটকে থাকতে হচ্ছে অভিযোগ করে দ্রুত উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।
তবে জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এখনো নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তাদের দ্রুত ফেরাতে ভারতীয় দূতাবাস, সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস এবং জাহাজের স্থানীয় এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
গত ২৪ মার্চ কলকাতা বন্দরের একটি জেটিতে কন্টেইনার তোলার সময় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে ‘এমভি মেরিন ট্রাস্ট-১’ কাত হয়ে ডুবে যায়। জাহাজে থাকা ১৫ নাবিকের সবাই জীবিত উদ্ধার পান।
৮৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও পাঁচ মিটার ড্রাফটের ২৪৪ কন্টেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে) ধারণক্ষমতার জাহাজটিতে সেসময় কন্টেইনার তোলা হয়েছিল ১৬৫টি। কোস্টাল এগ্রিমেন্টের আওতায় ‘এমভি মেরিন ট্রাস্ট-১’ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আনা নেয়ার কাজ করত।
জাহাজটির মালিকানা বাংলাদেশি কোম্পানি ‘মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেড’র। ডুবে যাওয়ার এক মাস পর গত ২৩ এপ্রিল মালিক কর্তৃপক্ষ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এখনো সেটি কলকাতা বন্দরের জেটির কাছেই আধডোবা অবস্থায় ডুবে আছে। ওই জাহাজের ১৫ নাবিককে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় শিপিং এজেন্টের মাধ্যমে খিদিরপুরের একটি হোস্টেলে রাখ হয়। ৩৫ দিন ধরে সেখানেই আছেন তারা।
হোস্টেলে খাবার দেওয়া হলেও সেখান থেকে তারা বের হতে পারছেন না এবং এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন জানিয়ে দ্রুত দেশে ফেরানোর আকুতি জানিয়েছেন।
গত বুধবার ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন ওই নাবিকরা। ভিডিওতে নাবিকদের পক্ষে জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সাল নিজেদের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে মালিক কর্তৃপক্ষ, ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল গতকাল শুক্রবার রাতে বলেন, ‘জাহাজ ডুবে যাবার পর থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের একটি হোটেলে আটকে রেখেছে। সেখানকার সাতটি কক্ষে আমাদের রাখা হয়েছে। জাহাজের ভারতীয় এজেন্ট ‘পেনন শিপিং লিমিটেডের’ তত্ত্বাবধানে আছি আমরা। কিন্তু আমাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আমরা কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। হোটেল কক্ষ থেকে বের হতে দিচ্ছে না। এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় আমাদের রাখা হয়েছে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে জাহাজের এজেন্টকে বলা হয়েছে, যাতে কেউ বাইরে যেতে না পারে’।
হতাশা প্রকাশ করে ফয়সাল বলেন, ‘আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি। তারপরও আমাদের এক প্রকার আটকে রাখা হয়েছে। শুনেছি বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের ছাড়বে না। এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাদের একজন কাউন্সিলর আমাদের সাথে বৃহস্পতিবার এসে দেখা করেছেন। তাকেও আমরা উদ্ধারের কথা বলেছি’। খবর বিডিনিউজের
জাহাজের মালিক কর্তৃপক্ষের ঢিলেমির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে ফয়সাল বলেন, ‘আমরা সকলেই একপ্রকার হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছি। আমরা দেশে ফিরতে চাই, বাড়ি ফিরতে চাই। পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করতে চাই। মালিকপক্ষ চেষ্টা করলেও তা যথাযথ না’।
প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রথম যাত্রায় এই দুর্ঘটনায় পড়েছেন ফাহিম ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষ চাইলে হয়তো পারে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত তার সমাধান নাও হতে পারে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন সকলের সহায়তা কামনা করি’।