এক মাসেও হয়নি যুবলীগের তিন কমিটি

23

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম যুবলীগের বহু প্রতীক্ষিত সম্মেলন শেষ হয়েছে। গত মাসের ২৮-৩০ মে পর্যন্ত টানা তিনদিন চট্টগ্রাম দক্ষিণ, উত্তর ও নগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা পদপ্রত্যাশী নেতাদের সমঝোতার পরামর্শ দিলেও তা ব্যর্থ হয়। পরে ঢাকা থেকেই কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়ে সম্মেলন প্রক্রিয়া শেষ করেন। কিন্তু সম্মেলন শেষের এক মাসেও চট্টগ্রাম যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ তিন ইউনিটের কমিটি গঠন হয়নি। ঢাকা থেকে কমিটি ঘোষণার খবরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতৃবৃন্দের দুয়ারে নিয়মিত ধর্ণা দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।
বাংলাদেশ যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘সহসাই কমিটি হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম যুবলীগের সুন্দর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যোগ্য নেতারাই কমিটিতে স্থান পাবেন। ইতোমধ্যে বায়োডাটা যাচাইবাছাই করে কমিটিতে আসতে পারেন এমন নেতাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। নানা কারণে সমালোচিত কোনো নেতা এবার কমিটিতে ঠাঁই পাবেন না।’
জানা যায়, গত ২৮ মে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন। ২৯ মে হাটহাজারী পার্বতী স্কুল মাঠে উত্তর জেলা যুবলীগ ও পাঁচলাইশের কিং অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে পদপ্রত্যাশী নেতাদের সমঝোতা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু কোনোভাবেই সমঝোতায় না আসায় ঢাকা থেকেই কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়ে সম্মেলন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৫১ জন, উত্তর জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩১ জন, মহানগরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১০৭ জন প্রার্থী নিজেদের পদপ্রত্যাশী দাবি করে কেন্দ্রে বায়োডাটা জমা দিয়েছিলেন। একইভাবে অন্যান্য সম্পাদকীয় পদে আসতে প্রায় হাজার খানেক প্রার্থী বায়োডাটা জমা দেন।
পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, কমিটি গঠনের বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান নিখিল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা যুগ্ম সম্পাদক শেখ নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন দেখে পদপ্রত্যাশী নেতাদের সংক্ষিপ্ত তালিকাও চূড়ান্ত করেছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাদের আপত্তির মুখে সহসাই কমিটি দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা। নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখতে ইতোমধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা সুপারিশ করেছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এসব নেতাদেরকেই চাইছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু এসব নেতার বিষয়ে কিছুটা আপত্তি আছে কেন্দ্রের। যুবলীগের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় নেতারা। মূলত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় কমিটি গঠনে দেরি হচ্ছে বলে জানা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগরের দুই নেতা নিজেদের বলয়ের মধ্যেই কমিটি করতে চাইছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই পদই আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগিয়ে নিতে চাইছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন সমঝোতার কমিটি দিতে। আবার চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা নেতাদের বলয়ের বাইরে গিয়েও অনেকেই সাংগঠনিকভাবে দক্ষ যুবলীগের কর্মী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। এখন কমিটির শীর্ষ পদ না পেলে তাদের কমিটিতে রাখা অসম্মানের পর্যায়ে পড়বে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা নিজেদের বলয়ের লোকদের রেখেই যুবলীগের কমিটি করতে চাইছেন। ইতোমধ্যে এই দুই নেতার পছন্দের নেতা কারা এটা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু বিতর্ক থাকায় কমিটি গঠনে সময় নিচ্ছে যুবলীগ। আওয়ামী লীগের এই দুই নেতাকে বশে রেখেই সুন্দর কমিটি করতে চায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই নেতার পক্ষে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার প্রভাব আছে। উত্তর জেলার নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ চাইছেন গত কমিটিতে ছিলেন এমন নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে। কিন্তু এই নেতাকে বাদ দিয়ে কমিটি করা না করা নিয়েই মূলত উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটির সমঝোতা হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।