এক মাসেই পাসপোর্ট অফিসের ১২ জন বদলি

73

রাহুল দাশ নয়ন

সেবা প্রদানে গ্রাহক হয়রানি ও ঘুষ দাবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সারাদেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নজরদারি বাড়িয়েছে। গত দুই মাসে দেশের ১৮টি পাসপোর্ট অফিসে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়েছে। যার রেশ ধরে পাসপোর্ট অফিসগুলোতে বদলি বেড়েছে। চট্টগ্রামে এখনো কোনো অভিযান না হলেও পাসপোর্ট অফিসে দুদক আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কারণে তড়িঘড়ি করেই গত এক মাসে মনসুরাবাদ ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের ১২ জন কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ অফিসের কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে। সে তুলনায় নতুন লোকজন কিছুটা কম এসেছে। নতুন দুটি অফিস চালু হওয়ায় লোক কম দিয়েছে। এরকম বদলি সারাদেশেই হয়েছে। আমার কাছে যে পরিমাণ লোক আসে সবাই সেবা পায়। কিছু দুষ্টু লোককে দমন করলে তারা ক্ষেপে নানান অভিযোগ করে। কিন্তু সে অভিযোগ আর এ অভিযোগ এক না।’
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রæয়ারি মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের সুপারিনটেনন্ডেন্ট মো. শরিফুল ইসলামকে জামালপুরে বদলি করা হয়। এর আগে গত ১২ ফেব্রæয়ারি পৃথক দুটি অফিস আদেশে একই অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পৌষরাম কুমার সরকারকে ঢাকা, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. দেলোয়ার হোসেনকে নড়াইল, রুনুশ্রী দাসগুপ্তাকে ঢাকা, মো. মাহবুব আলমকে নড়াইল, মো. মিনহাফিজুর রহমানকে মাগুরা, মোতালেব হোসেনকে মাগুরা ও মো. জাহিদুল ইসলামকে শেরপুরে বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও গত ২৬ জানুয়ারি সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর নাহিদা ইয়াছমিন ভূঁইয়াকে ঢাকায় বদলি করা হয়। সর্বশেষ গত ২ মার্চ পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের তিনজন ও মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসেই একজন কর্মচারীকে বদলি করা হয়।
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের একজন কর্মচারী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। সারাদেশে পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দুদক নিয়মিত অভিযান চালানোর কারণেই সবাই সতর্ক হয়ে গেছে। এরপরেও বেশ কয়েকজনকে বদলি করায় চট্টগ্রামের দুটি পাসপোর্ট অফিসেই বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
দুদক সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নরসিংদী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, নেত্রকোণা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পঞ্চগড় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নীলফামারী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যাত্রাবাড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বাগেরহাট আঞ্চলিক অফিস, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সেবা প্রদানে গ্রাহক হয়রানি, দালালের মাধ্যমে ঘুষ দাবি, সেবা প্রদানে বিলম্বের অভিযোগের ভিত্তিতেই অভিযানগুলো চালানো হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসগুলোতেও গ্রাহক হয়রানি ও দালালের মাধ্যমে ঘুষ দাবির অভিযোগ আছে। এর আগে ২০২১ সালে মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাইদকে ঢাকায় তলব ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছিল দুদক।
দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা তৎপরতা, গ্রাহক হয়রানি ও ঘুষ দাবির প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে দুদকের নজরদারি বেড়েছে। বেশ কয়েকটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযানও চালানো হয়েছে। কয়েকটি অফিসে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে দালালও আটক করা হয়েছে। ঝিনাইদহে পাসপোর্ট অফিসে আবেদনের পেছনে ‘কে’ বা ‘আর’ বা ‘ওকে’ লিখে দালালচক্রের স্বাক্ষরের প্রমাণ মিলেছে। চিহ্ন থাকা এসব পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া যায়। আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি।’
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হামিদ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ও আমার মার পাসপোর্ট জমা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। দালালের মাধ্যমে যাইনি বলে অজুহাত দেখিয়ে আমাকে লাইন থেকে ফেরত দেয়া হয়েছে। পরে পরবর্তীতে আমার মার নামে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট আমি আনতে গেলে সেটি দেয়া হয়নি। যদিওবা এক ব্যক্তিকে খরচের টাকা দেয়া মাত্র তিনি তাৎক্ষণিক পাসপোর্ট এনে দিয়েছেন। দুদক পাসপোর্ট আবেদনকারী হিসেবে ছদ্মবেশে অভিযান চালালেই দুর্নীতি ধরা পড়বে।’