এক মননশীল ও মানবিক মানুষের বিদায়

65

‘করোনা’র কারণে জগত জুড়েই এখন চলছে মৃত্যুর মহা মিছিল। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। আতংকে মানুষ এখন স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী। এই মহামারী বিনাও অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছে। মৃত্যু যেভাবেই হোক, যে কোনো মৃত্যুই পৃথিবীর জন্য শোকের, দুঃখের। আর সে মানুষটি যদি হন বোদ্ধা ও বিবেকবান, যার সৃষ্টির সৌহার্দ্যে ও সৌন্দর্যে সৃষ্টিজগত
উজ্জ্বল ও উৎফুল্ল, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই একজন মননশীল ও মানবিক মানুষ ছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। ‘ছিলেন’ কথাটি এজনই বললাম, এইতো গত ২৩ মার্চ দুপুরে তিনি দুনিয়া ত্যাগ করে পরপারের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। ইন্না-লিল্লাহ…. রাজেউন।
চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার গুলবাহার গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আশেক আলী খান এবং মায়ের নাম সুলতানা বেগম। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং ১৯৫৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সত্তরের দশকে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন এবং ১৯৭৪ সালে সেদেশের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিলো Differentiation, Polarisation and Confrontation in Rural Bangladesh.. তিনি একাধারে ছিলেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ- উপাচার্য, কবি, কথাসাহিত্যিক, শিল্প-সাহিত্য সমালোচক এবং আরো অনেক কিছু। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি ছিলেন একজন ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘নতুন কবিতা’ সংকলনে। সংকলনটির সম্পাদক ছিলেন সম্প্রতি প্রয়াত কবি আশরাফ সিদ্দিকী। ‘ঐ নতুনের কেতন’ উড়িয়ে ‘নতুন কবিতা’ সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৫০ সালে, যার সর্বকনিষ্ঠ কবি ছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। সেই সংকলনে স্থান পাওয়া অন্য কবিরা ছিলেন শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দীন আল আজাদ। ৮৪ বছর হায়াত পাওয়া এই মননশীল মানুষটি গোটা জীবনে বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ৮০ টি বই লিখেন। স্বীয় কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনে তিনি অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করেন। তৎমধ্যে ছোটগল্পে অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে লাভ করা বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে লাভ করা একুশে পদক অন্যতম।
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের লেখার সাথে আমার পরিচয় ঘটে চট্টগ্রাম শহরে আসার পর থেকে। ১৯৭৮ সালে চাকুরির কারণে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলাম আমি। নামীদামী পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যেতো তাঁর লেখা। দেখা যেতে যেতে তাঁর নামটিও পরিচিত হয়ে যায়। শুধু পরিচিত হয়েই যায়না, প্রাধান্যও পেয়ে যায়। প্রাধান্য পাওয়ার প্রধান কারণ, তাঁর লেখার গুন। গল্প, উপন্যাস, সাহিত্য সমালোচনা, প্রবন্ধ, কবিতা – সবক্ষেত্রেই ছিলো তাঁর সমান পদচারণা। একসময় শিল্পকলা পেয়ে বসেছিলো আমাকে। বুঝি আর না বুঝি, শিল্পকলা সম্পর্কিত কোনো বই বেরুলেই সেটা সংগ্রহ করা একধরনের পাগলামিতে পরিণত হয়েছিলো।পত্র-পত্রিকা বা ম্যাগাজিনেও সে সংক্রান্ত কোনো লেখা প্রকাশ পেলে চোখ বুঁজে কিনে নিতাম। এসব পাগলামি শুধু আমাকেই নয়, মাহফুজুর রহমান (বর্তমানে বার্তা সংস্থা টঘই-এর সম্পাদক) ও সালাউদ্দীন আইয়ুবকেও (বর্তমানে আমেরিকার শিকাগো স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের প্রফেসর) সংক্রমিত করেছিলো। তাঁর লেখা ‘চিত্রশিল্পঃ বাংলাদেশ’, ‘কামরুল হাসান’, ‘জয়নুল আবেদিনের জিজ্ঞাসা’ ‘মাইকেলের জাগরণ ও অনন্য প্রবন্ধ’, ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’, ‘শ্রাবণে আশ্বিনে‘, ‘জার্ণাল ৭১’, ‘আধুনিকতা ও উত্তর আধুনিকতার অভিজ্ঞতা’ সহ কবিতা ও প্রবন্ধের বেশ কিছু বই এখনো আমার সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। তাঁর লেখা যখন যেখানেই দেখতাম, প্রবল পিপাসা নিয়ে পড়তাম এবং পরিতৃপ্তি পেতাম। আমার ভুল যদি না হয়, জীবনের গোধূলি বেলায় এসে তিনি নিজের না বলা কথাগুলোকে কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। সেই কবিতার ভাষা ছিলো অন্যরকম, ভাব ছিলো অতলান্তিকতায় আলগ্ন। মোলায়েম ও মরমী ধরনের সেই কবিতাগুলো মাধ্যাকর্ষন শক্তির মতো পাঠককে টানে। যেমন-

যখন তুমি ট্যাক্সিতে উঠে চলে যাও
আমি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে
তোমার চলে যাওয়া দেখি

দূরত্ব বাড়িয়ে তুমি চলে যাও
আমি হাত বাড়িয়ে দূরত্ব কমাতে কমাতে
তোমার দিকে যাই
তবু দূরত্ব কমে না
ভালোবাসা কি দূরত্ব
ভালোবাসা কি চলে যাওয়া

আমার চোখে দূরত্ব কমে না
কুয়াশায় ভরে যায় চারদিক
পৃথিবীর সব কান্না শিশির হয়ে জমতে থাকে

আমি ডাকতে থাকি তোমাকে
কোথায় তুমি
চারধারে শুধু কুয়াশা আর শিশির

বর্বরতা সর্বত্র আছে
হারিয়ে যাওয়া সর্বত্র আছে
হাহাকার সর্বত্র আছে
আমি ভাবি ট্যাক্সির দূরত্ব দেখতে দেখতে
তুমি কতদূর চলে যাও

মাহফুজর রহমান ও সালাউদ্দীন আইয়ুব যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তখন এই প্রাজ্ঞ পুরুষটির কথা প্রায়ই শুনতাম তাদের কাছ থেকে। মাহফুজ ছিলো সাংবাদিকতা বিভাগের, আর সালাউদ্দীন ছিলো বাংলা বিভাগের ছাত্র। ওরা উভয়ই ছিলো বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের লেখার ভক্ত এবং ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর তখন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রখ্যাত প্রফেসর। সালাউদ্দীনের দুই বন্ধু মহসিন ও নাসির পড়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সরাসরি ছাত্র হওয়ার সুবাদে তাদের কাছ থেকে এবং মাহফুজ ও সালাউদ্দীনের কাছ থেকে শুনতে শুনতে আমিও নিজের অজান্তে তাঁর ভক্ত বনে যাই। যদিও দুনিয়ায় যতদিন ছিলেন, দুচোখে দেখা হয়নি তাঁর সাথে। দেখা যদি হয়েই থাকে, সেটা তাঁর লেখার সাথে। আর সেই দেখাই তো আসল দেখা। অবশ্য টেলিভিশনের পর্দায় কয়েকবার দেখেছিলাম তাঁকে।
তাঁর মুখের ভাষা ছিলো কমল-কোমল। ধীর লয়ে ধীমানের মতো কথা বলতেন তিনি। কি প্রবীণ, কি প্রিয়জন, কি পুত্রের বয়সী, কি ছাত্র – সবাইকে তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। অন্যকে আপন করার সহজাত সক্ষমতা ছিলো তাঁর। সালাউদ্দীনের কাছে তাঁর এহেন আন্তরিক আচরণের কথা যখন শুনতাম, আমি যুগপৎ অবাক ও আকৃষ্ট হয়ে যেতাম। তাঁর ছাত্র না হলেও সালাউদ্দীনকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। সালাহউদ্দীন সেকথা আমাকে প্রায়ই বলতো। আমার স্পষ্ট স্মরণে আছে, সালাউদ্দীনের প্রজ্ঞাবান পিতার প্রয়াণ হলে, তাকে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে মিরসরাইয়ের মোটবাড়িয়ার ঠিকানায় দরদমাখা একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। সালাউদ্দীন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর চিঠির লেখক ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন নামকরা অধ্যাপক। তাঁর সেই চিঠিটি সালাউদ্দীনের সৌজন্যে আমারও তখন পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। চিঠিটি সালাউদ্দীনের সংগ্রহে সম্ভবত এখনো আছে।
সালাউদ্দীন যখন ঢাকার ৩৩, নিউ ইস্কাটন রোড, ইসমাইল লেনের বাসায় থাকতো, তখন বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের সাথে তার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছিলো। সালাউদ্দীন তখন আন্ওয়ার আহমদের ‘কিছুধ্বনি’ (কবিতার কাগজ) ও ‘রূপম’ (গল্প পত্রিকা)-এর সাথে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলো। সালাউদ্দীন ও মাহফুজ তখন থাকতো একই বিল্ডিংয়ের দুই কি তিন তলায়, আর আনোয়ার আহমদ থাকতেন একা একই বিল্ডিংয়ের নিচতলায়। বৌয়ের সাথে বনিবনা না থাকায় সেখানে তিনি একাই থাকতেন। তখন ‘কিছুধ্বনি’ ও ‘রূপম’ ছিলো নামকরা সাহিত্য পত্রিকা। নামীদামী লেখক থেকে শুরু করে প্রতিভাবান তরুণ লেখক- সবাই পত্রিকা দু’টিতে দু’হাতে লিখতেন। নামীদামী লেখকদের কাছ থেকে লেখা আদায় কঠিন হলেও, কীভাবে লেখা আদায় করতে হয় সেটা আন্ওয়ার আহমদ জানতেন। যত নামকরা লেখক হোকনা কেন, সকলের সাথে তাঁর সানুরাগ সম্পর্ক ছিলো। তা ছাড়া প্রায়ই তিনি তাঁর বাসা কাম পত্রিকা অফিসে আড্ডার আয়োজন করতেন। আড্ডা মানে অর্থহীন আড্ডা নয়, সাহিত্য আড্ডা। সেসব আড্ডায় শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন খান, আবদুল মান্নান সৈয়দ থেকে শুরু করে কে না আসতেন! সকলেই আসতেন। বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর যখন আসতেন, তখন সেই আড্ডায় বয়সের ব্যবধান বিলীন হয়ে যেতো, বন্ধুর মতো ব্যবহার করতেন তিনি সবার সাথে। সালাউদ্দীনের কাছে যখন সেসব আড্ডার গল্প শুনতাম, আমি নিজেও আনন্দিত ও আন্দোলিত হয়ে উঠতাম। উল্লেখ্য, সালাউদ্দীনের সৌজন্যে তখন আন্ওয়ার আহমদের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। তিনি আমার উত্তর পতেঙ্গার অফিসের ঠিকানায় চিঠিও লিখেছিলেন। মাঝে মাঝে ফোনও করতেন লেখা পাঠাবার জন্য। তাঁর কবিতার কাগজ ‘কিছুধ্বনি’-তে কবি আবুল হোসেন ও কবি শহীদ কাদরীর ওপর আমার দুটি প্রবন্ধ এবং কিছু কবিতাও ছাপা হয়েছিলো সে সময়ের কয়েকটি সংখ্যায়। সেসব স্মৃতিরা এখন পোহায় রোদ্দুর।
আরেকটি স্মৃতির কথা বলে আলবিদা। তখন ‘উপমা’-আল মাহমুদ সংখ্যার জন্য লেখা সংগ্রহের কাজ নিয়ে আমি একরকম উন্মাদ। খবর পাই, ১৯৭৩ সালে দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতায় ‘লোকজ বাস্তবে আল মাহমুদের কবিতা’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। ‘উপমা’য় রিপ্রিন্ট করার জন্য লেখাটি আমার চাই, কিন্তু কীভাবে পাই! এত পুরোনো পত্রিকা, তাও দেশ স্বাধীন হওয়ার দু’বছর পরের পত্রিকা,পাবো কি না অনিশ্চয়তা ছিলো। সেই অনিশ্চয়তা নিয়ে যাই ঢাকায়। লেখাটি সংগ্রহ করতে ঢাকা যাওয়ার সেই স্মৃতি দিনলিপির (২৯ ডিসেম্বর ১৯৯১) পাতা থেকে এখানে হুবহু তুলে ধরছি-
“সকাল ১০ টায় সালাউদ্দীন (আইয়ুব) সহ যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে। যাওয়ার উদ্দেশ্যÑ ১৯৭৩ সালে দৈনিক বাংলা’য় ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘লোকজ বাস্তবে আল মাহমুদের কবিতা’ শীর্ষক যে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিলো, তা কপি করে আনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে! সেখানকার পত্র-পত্রিকার তাক আজই অন্যত্র সরানো হচ্ছে। আর পত্র-পত্রিকাগুলো কাকের বাসার মতো এতই এলোমেলো করে পড়ে আছে যে, প্রয়োজনীয় পত্রিকার কপিটি খুঁজে বের করা অসম্ভব। সেখান থেকে যাই মহসিন হলে। ইশারফ হোসেনকে বলি আল মাহমুদের কবিতার ওপর লেখা ড. সুমিতা চক্রবর্তীর প্রবন্ধটি নিয়ে সে যেন আগামীকাল অবশ্যই সালাউদ্দীনের বাসায় আসে। লেখাটি ‘উপমা’র জন্য প্রয়োজন। আল মাহমুদও লেখাটি ‘উপমা’য় ছাপাতে বলেছেন। সেখান থেকে যাই পাবলিক লাইব্রেরিতে- বোরহানউদ্দিন খানের ঐ লেখাটি সংগ্রহ করতে। লাইব্রেরির একজন কর্মকর্তা অনুসন্ধান শেষে জানালেন, দৈনিক বাংলা’র ১৯৭৩ সালের কোনো ফাইল তাঁদের সংরক্ষণে নেই। পোড়া কপাল আর কাকে বলে! ব্যার্থ হওয়া ব্যাথিত মন নিয়ে দ্রুত রিকশায় উঠি এবং বাংলা একাডেমিতে যাই। পুরনো পত্র-পত্রিকা যেখানে সংরক্ষণ আছে সে কক্ষের কর্মকর্তা জানালেন, পুরনো পত্র-পত্রিকা দেখতে হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি লাগবে। অবশেষে লিখিত অনুমতি নিয়ে অনুপ্রবেশ করলাম কাঙ্খিত কক্ষে। অনেকক্ষণ তালাশ শেষে কাঙ্খিত লেখাটি পাওয়াও গেলো। ভেবেছিলাম, সাথে নেয়া ফুলস্কেপ কাগজ দুটিতেই হয়ে যাবে। কিন্তু লেখার পরিধি দেখে মনে হলো কাগজ আরো লাগবে। কিন্তু এখন কাগজ কোথায় পাই! বের হয়ে আশেপাশে দেখলাম, কোথাও নাই। হায়রে ঢাকা! শেষে সালাউদ্দীনকে পাঠালাম যেখান থেকেই হোক দ্রুত কাগজ কিনে আনতে। সে রিকশায় করে গিয়ে আধ মাইল দূরে থেকে কাগজ কিনে আনে। একটি দুটি নয়, পুরো এক দিস্তা। তার কান্ড দেখে আমি হাসলাম। অবশেষে কাঙ্খিত লেখাটি দ্রুত কপি করতে শুরু করলাম। সালাউদ্দীন পাশে বসে কি যেন পড়ছিলো। সেখানকার একজন কর্মকর্তা জানালেন, সাধারণত আড়াইটার আগে লাইব্রেরি বন্ধ হয়না। কিন্তু আজ তাদের ৩ জন কর্মকর্তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হবে বিধায় দুপুর ১ টায় তারা সবকিছু বন্ধ করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যেখানে হবে সেখানে চলে যাবেন। এভাবে মাঝপথে মাথায় বাজ পড়বে ভুলেও ভাবিনি। শেষে সালাউদ্দীন সহ ভাগাভাগি করে কপি করতে লেগে গেলাম। বাইরে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের গোলাগুলির আওয়াজ। আমাদের পাশের চেয়ারে বসা ছিল এক সুন্দরী তরুণী। সে গায়ে পড়ে বারবার আমাদের সাথে কথা বলার কোশেশ করছিলো। দু-একটি কথাও হয়। এদিকে সময় প্রায় শেষ, কিন্তু কপি করা কিছুটা বাকি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে আরো ১০ মিনিট বাড়িয়ে নিই এবং বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের লেখাটি সম্পূর্ণ কপি করতে সমর্থ হই।”
উল্লেখ্য, আমার সম্পাদিত ‘উপমা’- আল মাহমুদ সংখ্যায় উক্ত লেখাটি স্থান পায়, এবং সেটি ছিলো উক্ত সংকলনে উজ্জ্বল সংযোজন। সংকলনটি প্রকাশ পেয়েছিলো চট্টগ্রাম থেকে- ২৬ মার্চ ১৯৯৪ সালে।