এক পশলা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল নগরীর নিম্নাঞ্চল

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

খানিকটা আগেভাগে দেশজুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিস্তারের মধ্যেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের এক পশলা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে আগাম বর্ষার এ বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা কোথাও কোথাও হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। তবে বেলা বেড়ে বৃষ্টি কমার সাথে সাথে এসব এলাকায় জমে যাওয়া পানি নালা ও খাল দিয়ে নেমে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে বৃষ্টিতে নগরীর অনেক নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। এর মধ্যে নগরীর চকবাজার, ডিসি রোড, বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ ও চান্দগাঁও এলাকায় জলজট সৃষ্টি হয়। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচলতি লোকজনকে কয়েক ঘণ্টা জলজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ময়লা-আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশনের অনেক খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নামতে পারেনি। দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নাঞ্চলের সড়কজুড়ে পানি জমে ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিবছর সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টেকনাফ উপক‚ল দিয়ে দেশের স্থলভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। আর তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। এসময় থেকেই দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে কার্যত বর্ষণ শুরু হতে দেখা যায়। কিন্তু এবার মে মাসের শেষদিকেই মৌসুমি বায়ু দেশের স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে তা সিলেট অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। অচিরেই তা দেশের বাকি এলাকাগুলোতে বিস্তৃতি লাভ করার অনুক‚ল পরিবেশও বিদ্যমান রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর খানিকটা আগেভাগে আগমনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতও শুরু হয়। ফলে দেশের বেশিরভাগ এলাকা বিশেষ করে উপক‚লীয় অঞ্চল ও উত্তর -পূর্বাঞ্চলে কখনও থেমে থেমে, কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু শুরুতে উপকূলে এসে কয়েক দিন স্থির ছিল। তারপর তা দেশের স্থলভাগে প্রবেশ করে পর্যায়ক্রমে বৃষ্টি ঝরিয়ে দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করছে। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া, নিম্নাঞ্চলে জলজট সৃষ্টি হওয়া চট্টগ্রাম মহানগরে ২৭ মিলিমিটার, ফেনীতে ৪৭ ও কক্সবাজার উপকূলে ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।
দেশের সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাতের তথ্য রয়েছে সংস্থাটির পরিসংখ্যানে। অধিদপ্তরের প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় এই প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ পূর্বদেশকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর বিস্তার লাভ করেছে। আর লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও মংমনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আলামত বিদ্যমান রয়েছে। বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও তাতে দেশজুড়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় তেমন হেরফের হবে না।
এর আগে অধিদপ্তরের প্রচারিত আবহাওয়ার তিন মাস মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এবার জুন মাসের প্রথমার্ধেই সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল বিস্তার লাভ করতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিúাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি পারে। পরবর্তী জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চার বছর আগে অর্থাৎ বিগত ২০১৯ সাল বা ১৪২৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখেই ‘শ্রাবণের উপস্থিতি’ আগাম বর্ষার এক ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই বছর মধ্য বৈশাখ পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা বিগত সাড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আষাঢ়-শ্রাবণকেই বর্ষাকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষার রেশ থেকে যায়। অর্থাৎ জুনের শেষ থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্তই বর্ষা মৌসুম ধরা হয়ে থাকে।