এক ঠিকাদারে জিম্মি পাউবোর দুই প্রকল্প!

34

রাহুল দাশ নয়ন

আনোয়ারা ও বাঁশখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বড় প্রকল্পে ৮৭০ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। এই দুই প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজে প্রায় ৭৫ কোটি টাকার কাজ পায় মশিউর এন্ড ব্রাদার্স নামে কুমিল্লার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে এই একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়েছে দুটি বড় প্রকল্প!
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘ক্যান্সার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁশখালী অংশে চলমান এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করা হয়েছে। আনোয়ারায় সমস্ত নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে সেখানেও একটি প্যাকেজের কাজ বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২৯৩ কোটি টাকার কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। ছয় বছরেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এখনো কাজের অগ্রগতি ৮৯.২ শতাংশ। উপকূলীয় ছনুয়া ইউনিয়নে ছয়টি প্যাকেজের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার কাজ শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্প নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। গত জুলাই মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান মশিউর এÐ ব্রাদার্সকে বাতিল করে নতুনভাবে দরপত্র আহব্বানের তোড়জোড় চলছে। বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে ছনুয়া অংশে প্রায় দুই হাজার ৪০০ মিটার কাজ পায় মশিউর ব্রাদার্স। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান না থাকায় সেখানে জরুরী প্রকল্প হাতে নিয়ে মাটি ভরাট করে জিও ব্যাগ বসানো হচ্ছে। কয়েকদফা ভাঙনের মুখে পড়ে ছনুয়া ঘাটের দক্ষিনাংশটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরে সেখানে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মশিউর এন্ড ব্রাদার্স নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাদের হাতে ছয়টি প্যাকেজে প্রায় ৩২ কোটি টাকার কাজ ছিল। মন্ত্রণালয়ের আদেশে গত জুলাই মাসে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন দরপত্র আহব্বান করা হবে। এতে যেকোন প্রতিষ্ঠান কাজটি পেতে পারে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মশিউর এন্ড ব্রাদার্সের কাজের তদারকিতে থাকা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, বাঁশখালীতে বন বিভাগ আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করার কারণে দুই বছর কাজ করতে পারি নাই। এছাড়াও আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। সর্বসাকুল্যে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এ প্রকল্পে আমরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ কাজ নিয়ে একপ্রকার প্রতারিত হয়েছি। স্থানীয়রা মোটেই সহযোগিতা করে নাই। অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হওয়ায় কাজ করার মতো উপযোগী পরিবেশ ছিল না। এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর লোকদের দিয়ে কাজ করাতে হবে। সিভিল মানুষ কাজ করতে গেলে স্থানীয়রা খুব যন্ত্রণা দেয়। নানা কারণে কাজটি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
আনোয়ারায় চলমান ৫৭৭ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু এক ঠিকাদারেই পিছিয়ে পড়ছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের চারটি প্যাকেজে প্রায় ৪২ কোটি টাকার তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মশিউর এন্ড ব্রাদার্স। এরমধ্যে হাইলধরে দুই প্যাকেজে ১৪০০ মিটার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে ২০-২৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। সাগর এলাকায় চার পয়েন্টে একটি প্যাকেজে কাজ চলছে। কিন্তু ফকিরহাট এরাকায় কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ৪০ হাজার ব্লক বানানোর কাজ এখনো বাকি। দুটি প্যাকেজের কাজ শেষ হলেও সী ডাইক ও ফকিরহাট অংশের কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটেনি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন খোদ পাউবো কর্মকর্তারা। যে কারণে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মালামাল এনে কাজ শুরু করার তাগাদাও দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনোয়ারায় কাজ করেনি তা কিন্তু না। শুধুমাত্র ফকিরহাট এলাকায় একটি প্যাকেজের কাজে এ প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট ধীরগতিতে এগুচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠান আরো কিছু জায়গায় কাজ করলেও কিন্তু ফিনিশিং দিচ্ছে না। যে কারণে আমি বলেছি ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ নির্মাণ সামগ্রী আনতে না পারলে কাজ করতে দিবে না। নভেম্বরের মধ্যেই আবার তাগাদা দেয়া হবে। নয়তো কাজ বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা আটকে দিয়েছি। কোন বিলও দিইনি।’
মশিউর এন্ড ব্রাদার্সের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আনোয়ারায় চলমান চারটির মধ্যে দুটি প্যাকেজের কাজ শেষ করেছি। পারকি এলাকায় প্লেসিং বাকি আছে। ফকিরহাটে বস্তা ডাম্পিং চলছে। এ মাসের শেষেই শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করবো। বৃষ্টির কারণে ট্র্যাক্টর মুভমেন্ট করতে গেলেই বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। যে কারণে কাজ করা যাচ্ছে না।’