এক জোড়া মাছ

70

সুবার জন্মদিনে ছিল গতকাল অনেক আয়োজন, অনেক আনন্দ। বন্ধুরা মিলে অনেকদিন পর খুব ভালো সময় কাটাল। নীলা আন্টি সুবাকে খুব ভালোবাসে। তার একমাত্র মেয়ে চৈতী। সুবার সাথে কেজিতে পড়ছে। তিনি কাঁচের হাড়ির ভেতর একজোড়া মাছ এনেছেন। ছোট হাড়িতে রঙিন মাছ দুটো অনেক সুন্দর লাগছে। সুবা উপহার পেয়ে খুব খুশি হলো। এখন মাছের সাথে গল্প করে অনেকটা সময় চলে যায় তার। মাছের খাবার দেয়। মাছ খেয়েছে কিনা সেটাও দেখে। মাছকে সাঁতার কাটতে দেখলে খুশি হয়। চুপ থাকলে মন খারাপ করে। ভাবে, মরে গেছে বোধ হয়। কমলা রঙের মাছটা একটু দুষ্টু। ওর নাম রেখেছে কিমি। আর হলুদ মাছ শান্ত। ওর নাম হিমি। কিমি প্রায় সময় হিমিকে বিরক্ত করে। খাবার দিলে আগেই দৌড়ে এসে খেয়ে নেয়। হিমি চুপ করে থাকলে মাথা দিয়ে গুঁতোতে থাকে। সুবা মাঝে মাঝে রেগে যায়। মাকে বলে,আম্মু ওকে দিয়ে আস তো। কিমি একটু মিলেমিশে থাকেনা। মা একটু হেসে বলেন,ওরা খেলা করে মামনি। অত ছোট জায়গায় ওদের তো ভালো লাগেনা। তাই অমন করে। সুবা মায়ের কথা শুনে মনে মনে কিছু ভাবে।

সকালে মা খাবার দিতে ভুলে গেছে একদিন। সুবার ঘুম ভেঙ্গেছে। মা খাবার দেয়নি শুনে মন খারাপ। বলে,ওদের ক্ষুধা লেগেছে না? দাওনি কেন? মা বলেন,তুমি যদি মন খারাপ কর। তাই দেইনি আম্মু। চল দু’জন মিলে দেই। খাবার দিয়ে সুবা একটু ফোঁপায়। মা বলেন,কী হলো আবার? আজকে পানি বদলাতে হবে। যদি মরে যায়। তাড়াতাড়ি কর। সুবার মা বলেন,সমস্যা হবে না। দুপুরে দিয়ে দেব। ওরা তো নাস্তা করছে। চল তুমিও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেবে।

সুবা মাছের ছবি তোলে। আর কিমিকে বকা দেয়। বলে, তুমি পঁচা কেন এতো? হিমি কে বিরক্ত কর। ওর কষ্ট হয়। হিমি তোমার সাথে থাকতে চায় না। আর এমন করবে না। সুবার কথা শুনেছে কিনা জানেনা সে। পরদিন সকালে মা মেয়ের ঘুম ভাঙ্গে। মাছকে খেতে দেবে। মা খেতে দিতে গিয়ে অবাক হয়। বলে, আম্মু আরেকটা মাছ কোথায়। কিমি আছে। হিমি তো নেই। সুবা ছুটে আসে। দেখে, তাইতো হিমি নাই। মা বোঝেন মাছ পড়ে গেছে। মেঝেতে তাকিয়ে দেখেন ঠিক তাই। হিমি পড়ে আছে। বলেন,ওই যে আম্মু দেখ হিমি। সুবা তাড়াতাড়ি করে হিমিকে তুলে নেয়। মা তো মনে মনে কষ্ট পান। ভাবেন, এবার সুবাকে কিভাবে যে সামলাবেন। সুবা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে, জানতাম এমন হবে। আম্মু কিমিকে আর খাবার দিও না তো। ও খুব খারাপ। ওর জ্বালাতনে হিমি লাফ দিয়েছে। মা বলেন, তা নয় হয়তো। দু’জনে মনের খুশিতে খেলছিল। হিমি বড় তো, সে জন্য পড়ে গেছে। সুবা কান্না শুরু করে। বলে, না আম্মু তুমি ওকে দিবে না। ওর শাস্তি হোক। বন্ধুকে বিরক্ত করেছে। তা কি সহ্য হয়! দুঃখ পেয়ে লাফ দিয়েছে। মা বলেন,আমি আরেকটা মাছ এনে দেব তোমাকে। কেঁদোনা। সুবা বলে, না আনবে না তো। কিমি একা থাক। বুঝবে কেমন লাগে। ওর বন্ধুর দরকার নেই।
সুবার মা বলেন, দেখ আম্মু কিমির মন খারাপ। তারপর খাবার দিলেন। কী অবাক কান্ড! যে মাছ ছুটে এসে খেত, সে চুপ। খাচ্ছে না। মা বললেন,আম্মু কিমি ওর ভুল বুঝেছে। দেখ, চুপ হয়ে আছে। এখন খেলার সাথি নেই। ও কষ্ট পাচ্ছে। একাকী বোধ করছে। খারাপ ব্যবহার করলে বন্ধু ছেড়ে যায়। কিমি তা ঠিক বুঝেছে।

সুবা চোখ মুছে আর বলে, কষ্ট পেতে দাও। আচ্ছা আম্মু, হিমিকে কবর দিতে হবে না? মা বলেন,হুম আম্মু। মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। সুবা তখন মোবাইল নিয়ে আসে। বলে, একটা ছবি তুলে রাখি। মা জানতে চান কেন? সুবা বলে,কবর দিলে আমি কী আর দেখতে পারব। ছবি থাকলে দেখতে পারব। মা বলেন,আচ্ছা তুলে রাখ। তারপর দুজন গেলেন মাছকে কবর দিতে। সুবা কেঁদে কেঁদে বলে,আম্মু মাছের আত্মা কী আল্লাহর কাছে চলে গেছে? মা বুঝিয়ে বলেন,দুনিয়াতে ওদের জন্ম। দুনিয়াতেই ওদের সব শেষ হয়। মানুষের আত্মা আল্লাহর কাছে যায়। এভাবে তিনি আরও অনেক গল্প শোনান। সুবার মনকে হালকা করে দেন।
আর বিকেলে আরও এক জোড়া চমৎকার দুটো মাছ এনে দেন। সুবা নতুন বন্ধু পেয়ে খুশি হয়ে যায়।
কিমির নতুন বন্ধু হয়। ও আর আগের মতো নতুন বন্ধুদের আঘাত করেনা। বুঝেছে বন্ধু হারাবার কষ্ট। তাই নতুন বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে থাকে।