এক চেয়ারম্যান বনাম তিন চেয়ারম্যান

17

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

লড়াইটা বেশ জমজমাট। এক চেয়ারম্যান একদিকে, তিন চেয়ারম্যান আরেক দিকে। মেয়ের বাড়ি এক চেয়ারম্যানের সীমানায়। ছেলের বসত অন্য চেয়ারম্যানের এলাকায়, তবে ভোটের নানা হিসেবে সাথে আরও দুই চেয়ারম্যান। অর্থাৎ সালিশের শক্তি পরীক্ষায় এক চেয়ারম্যান বনাম তিন চেয়ারম্যান।
বিচারের বিষয়ে-মেয়ে ও ছেলের বা বলা যেতে পারে পারিবারিক মনোমালিন্য। বিয়ের বছর না ঘুরতে দেনা-পাওনা নিয়ে নানা অশান্তি, কেচ্ছাকাহিনী। স্ত্রী বছরে কয়েক বার বাপের বাড়ি চলে আসে। অভিযোগ স্বামী বাহাদুর মারধর করে। অতএব কোনো ক্রমেই তার ঘর করা সম্ভব না। কিন্তু এর মধ্যে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম। নাম নীলিমা।
স্ত্রীর পক্ষে থাকা এক চেয়ারম্যানের যুক্তি- যেহেতু এটা নারী নির্যাতন, তাহলে ডিভোর্স খসড়া মেনে মেয়ের প্রাপ্য খরচ-পাতি মিটিয়ে দেওয়া হোক।
ছেলের পক্ষে সাফায় গীত গাওয়া তিন চেয়ারম্যানের পাল্টা বয়ানÑ এসব স্ত্রীর সাজানো নাটক। স্বামী পুরুষ যথেষ্ট ন¤্র-ভদ্র। স্ত্রীর গায়ে কদাচ হাত তোলে না। স্ত্রী আসলে সংসার ভেঙে চলে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। আর মারধর যদি করে থাকে, তবে তার চিৎকার-চ্যাঁচামেচি কান্নার আওয়াজ কি ঘরের ও প্রতিবেশির অন্য মানুষজন শুনতে পেত না?
এভাবে পক্ষে-বিপক্ষে তর্কাতর্কি চলতে থাকে। সুতরাং এটা ‘অত্যাচার’ না ‘অভিনয়’ প্রমাণের জন্য কোনো অকাঠ্য হাতিয়ার কেউ যোগাড় করতে পারে না। বাড়িতে তো কেউ আর সি.সি.টিভি লাগিয়ে রাখেনি।
একসময় সালিশ পন্ড হওয়ার পর্যায়ে। যে যার মত হুইসেল বাজিয়ে চলে যাবে- এমন সময়ে এক চেয়ারম্যানের নতুন প্রস্তাব। ‘আচ্ছা-অবলা স্ত্রীকে স্বামী সত্যি সত্যি মারধর করে কিনা, তার ৫ বছরে কন্যা সন্তানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে তো হয় !’
সকল চেয়ারম্যান অবশ্য এই যুক্তি মেনে নেন। তারা নীলিমাকে একান্তে ডেকে জিজ্ঞেস করেÑ ‘তোমার মাকে কি তোমার বাবা মারে?’
‘হ্যা মারে। প্রথমে মায়ের মুখে বাবা জোর করে কাপড় গুঁজে দেয়, তারপর মারতে থাকে।’
কান্নার আওয়াজ কেন যে বাতাসে ভেসে আসে না বোঝা গেলো।
হাতে-নাতে প্রমাণ। এক চেয়ারম্যান স্ত্রীর পক্ষে দাবিকৃত টাকা আদায়ের কথা পাকা করে নিলেন। কিন্তু এতে অন্য তিন চেয়ারম্যানের আঁতে লাগল ঘা ।
তাই তিন চেয়ারম্যানের শলাপরামর্শ মত স্বামী টাকা-পয়সা না দেওয়ার উছিলায় জজ কোর্টে নতুন করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা টুকে দেয়। মহামান্য বিচারক বিশদ শুনে তেজস্বী স্বামীকে জেলে ঢোকানোর আদেশ দেন। তখনই শুরু হাতজোড় স্বামীর কাকুতি-মিনতি। বিচারক হেসে স্বামীকে নির্দেশ দিলেনÑ ‘আপনি ওকে ঘরে তুলে নেন। আর কোনোদিন যেন মারধর করা না হয়। প্রতি ছয় মাস পর পর দুইজনে একসাথে এখানে আসবেন। যদি শুনি, গায়ে হাত তুলেছেন তবে বিধি ব্যবস্থা জারি হবে।’
স্বামী-নবাব বেড়ালের মত লেজ গুটিয়ে মিউ কণ্ঠে বলে ওঠেÑ ‘ঠিক আছে স্যার।’
ছয় মাস পরপর এজলাশে হাজিরা দিতে আসেন ভয় থরথর স্বামী ও চুপি চুপি খুশিতে আটখান স্ত্রী। দুই বছর এভাবে পরীক্ষা চালিয়ে অবশেষে ফাইল ক্লোজ করে দেন বিচারক মহোদয়।
ইতোমধ্যে দু’জনের নীরব কানাকানির সুখের মিলিত সংসারে ফুটফুটে সন্তান নিয়ে ডাক্তার চেম্বারে ঘটনার অনুপ্রবেশ।
কী সুন্দর বিচারের বাণী! বাহ্্ সমাধান।