এক ইস্যুতে এক হলেন চট্টগ্রামের ৩ নেতা

123

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় হাসপাতাল হচ্ছে না। এই কারণে ওই এলাকা সংরক্ষণের জন্য আন্দোলনকারীরা তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরিসমাপ্তিরও ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণায় মহাসমাবেশ আয়োজন করছেন তারা। আজ শনিবার সেই মহাসমাবেশ। এখানে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় চট্টগ্রামের তিন নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত থাকবেন। যাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সিআরবিতে এনে দিয়েছে সফলতা। অবশ্য সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী এই আন্দোলন সংগ্রামে সাংবাদিক, পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিককর্মীসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ একাত্ম হয়ে দৃঢ়চিত্ত দেখিয়েছেন।
আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দ ও নগরবাসীর পর্যবেক্ষণ- সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে নগরীর বিশিষ্টজনদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করলেও যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নেপথ্যে অভিভাবকতুল্য ভ‚মিকা রেখেছেন ড. অনুপম সেন এবং চট্টগ্রামবাসীর চাওয়ার কথাটাকে সরকারের শীর্ষ মহল বিশেষতঃ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করেছেন জ্যেষ্ট নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তাদের দু’জনের অভিভাবকত্বে সিআরবি রক্ষার আন্দোলন এগিয়ে গেছে অনিবার্য সফলতার দিকে।
চট্টগ্রামবাসীর এ আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, ডা. মাহফুজুর রহমান, ড. ইদ্রিস আলী, মফিজুর রহমান, এডভোকেট ইফতেখার সাইমুলসহ নগরের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবর্গ।
অপরদিকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সত্যিকার অর্থে চট্টগ্রামবাসীর প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে সামনের সারিতে থাকা সাংবাদিক ঋত্বিক নয়ন জানান, ‘৫ নভেম্বর সিআরবিতে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সকলে উপস্থিত হবেন। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।’
সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প না হওয়ায় সেখানে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় উদ্যান’ বাস্তবায়নের দাবিও জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
এই বিষয়ে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল জানান, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। এরপর সিআরবি থেকে হাসপাতাল সরিয়ে নিতে গত ১৬ অগাস্ট সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিদের সাক্ষরিত একটি চিঠি রেলমন্ত্রীকে দেন।
তিনি আরো বলেন, এর দুয়েকদিনের মধ্যেই রেলমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হয়। প্রধানমন্ত্রী তখন জানিয়ে দেন, পাবলিক সেন্টিমেন্টের বাইরে গিয়ে সিআরবিতে কিছু করা হবে না। সিআরবি রক্ষায় টানা ৪৮০ দিনের কর্মসূচি এই মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নগরীর ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী সিআরবিতে পিপিপি প্রকল্পের আওতায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকার জমি হাসপাতাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু হয়। সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবনা অনুসারে, এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা রেলওয়ের হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে।
সিআরবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপিও স্বাক্ষর করেন। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায় পিপিপির আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সীতাকুন্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। উল্লেখিত চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি জানেন প্রাচ্যের রানি হিসেবে খ্যাত সাগর, পাহাড়, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি আমাদের চট্টগ্রাম। নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ নগরের রূপ মাধুর্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত কেন্দ্রীয় রেলভবন তথা সিআরবি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সিআরবি ভবনটি শুধু চট্টগ্রামেই নয়, পুরো দেশের মধ্যে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে রয়েছে অসংখ্য রেইনট্রি। যেগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পেরিয়ে গেছে শত বছরের বেশি। এটি ব্যস্ততম নগরী চট্টগ্রামের অক্সিজেন সরবরাহের উৎস হিসেবেও পরিচিত।
স¤প্রতি এক গবেষণায় সিআরবিতে প্রায় ২২৫টি দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকায় ঘেরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমÐিত স্থান হিসেবে সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের মনে আলাদা স্থান করে নিয়েছে। এখানে বৃক্ষরাজির শীতল ছায়াতলে বিশেষ করে অনিন্দ্যসুন্দর শিরীষতলায় আয়োজিত হয় বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীসহ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ করে চট্টগ্রামের তিন আওয়ামী লীগ নেতার ঐক্যবদ্ধ আন্তরিক প্রচেষ্টার ফল হচ্ছে সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল না হওয়া। তবে শেষ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ আন্তরিকতার ফলেই সিআরবি’র সজুব শ্যামলিমা রক্ষা পেয়েছে বলেও জানান তারা।
সিআরবি নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি’র বক্তব্য হচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকার সাধারণ মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। সবুজ নষ্ট করে, পরিবেশ বিপন্ন করে সিআরবিতে প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মাণ যাতে না হয় সেই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খুব আন্তরিক।