এক্সট্রা কারিকুলাম ‘এক্সট্রা’ নয়, অ্যাসেনশিয়াল

16

 

-সকালবেলা পড়ালেখা করলে মনে থাকে তাই এখন একটু বেশি বেশি পড়ো।
-আরে এখন তো বিকালবেলা, শিক্ষক এসেছেন পড়তে বসো।
-সন্ধ্যা হয়েছে পড়তে বসো।
-এখনো রাত বেশি হয়নি আরেকটু পড়ো।
সারাদিন রাত এই পড়তে বসো, পড়তে বসো বলতে বলতেই অভিভাবকদের সময় কেটে যায়। তারা কেবল চায় তাদের সন্তান সব সময় লেখাপড়া করুক কারণ তাদের মানুষ হতে হবে যে! অনেক বড় মানুষ! কিন্তু একজন মানব শিশুর মস্তিষ্ককে সচল রাখতে লেখাপড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এটি অভিভাবকরা মানতেই পারেন না। চলুন দেখি মস্তিষ্ক নিয়ে বিজ্ঞান কি বলছে। মানুষের চিন্তা, অনুভূতি ও কাজ পরিচালনার কেন্দ্র হলো মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কে ডান-বাম বলে দুটি অংশ আছে, যাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিপরীতধর্মী। প্রতিটি অর্ধেক অংশ ভিন্ন ভিন্ন ও নির্দিষ্ট কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। ডান অংশটি সৃজনশীলতা ও আবেগে ভরপুর। বাঁ দিকের অংশটি আবেগ ও যুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যাদের বাম পাশের মস্তিষ্ক সচল সে যুক্তি, বিবেচনা করে কাজ করে। অর্থাৎ মানুষের ব্রেনের বাম পাশটা লজিক্যাল কাজ করে যা রুটিন মাফিক, যেমন- লেখাপড়া, খাওয়া, ঘুমানো ইত্যাদি। এগুলোর ভিতরে কোন ক্রিটিভিটি নাই।
অন্যদিকে, যাদের ডান মস্তিষ্ক বেশি সচল তাদের ব্যক্তিত্বে কল্পনা, সৃজনশীলতা,আবেগ-অনুভূতি,নতুন কিছু সৃষ্টির চিন্তা-ভাবনা, মায়া-মমতা-ভালোবাসা ইত্যাদি দিকগুলো বেশি দেখা যায়।
সুতরাং যে শিশু শুধু লেখাপড়ার মধ্যে থাকে তার কেবল মস্তিষ্কের বাম অংশটি কাজ করে, ডান অংশটি কাজ করে না। আর যে শিশুর মস্তিষ্কের অর্ধেক কাজ করে তার মধ্যে একাগ্রতা থাকেনা। সে কোন কিছু করতে পারেনা, তার আই-কিউ লেভেল কমে যায়। তাই শিশুটিকে পড়তে বসলে উঠে চলে যাড, পড়ায় মন বসে না, পড়তে চায় না। সুতরাং শুধু মাত্র বামপাশ সক্রিয় হলে অন্য কাজের পাশাপাশি পড়াশোনারও ক্ষতি হয়।
অন্যদিকে, যার আই-কিউ লেভেল যত বেশি তার আত্মবিশ্বাস ততো বেশি এবং সে সবকিছুতে ভালো করবে যেমন-লেখাড়া, খেলাধুলা, আবৃত্তি ইত্যাদি।
তাই লেখাপড়াসহ সব বিষয়ে ভালো করার জন্য মস্তিষ্কের ডানপাশকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর এজন্যই শিশুদের এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ বাড়ানো দরকার। এটাকে এক্সট্রা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে এটা এক্সট্রা নয়, এসেনশিয়াল। একটি শিশু যখন গান শুনবে, গান গাইবে, খেলবে, উপস্থিত বক্তৃতা করবে, ছবি আঁকবে তখন তার মস্তিষ্কের ডানপাশ সক্রিয় থাকবে।
শিশুর একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য মস্তিষ্কের ডানপাশকে সক্রিয় করতে হবে। যদি একটা শিশু মনোযোগ দিয়ে সবকিছু দেখে তখন তার স্মৃতিশক্তি বাড়বে এবং তার আইকিউ বাড়বে। তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে ফলে তার কাছে কোন কিছুই কঠিন মনে হবে না।
অতএব, আপনি যদি চান আপনার শিশু বেড়ে উঠুক সৃজনশীল বা শৈল্পিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে, তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি আপনার শিশুকে এক্সট্রা কারিকুলাম কাজের সুযোগ দিন।