একের পর এক গোপন ‘তেল ভান্ডারের’ সন্ধান

56

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরবরাহ ঘাটতির কারণে ঈদের আগে থেকেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। শুল্ক ও কর ছাড় দিয়েও সয়াবিন তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়নি। উল্টো ভোজ্যতেলের একের পর এক মূল্য বৃদ্ধির রেকর্ড হওয়ার পরিস্থিতিতে বাজার থেকে পণ্যটি উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত আমদানি ও নতুন করে দাম সমন্বয়ের পরও খুচরা বাজারে এখনো ভোজ্যতেল মিলছে না।
ঈদুল ফিতরের আগে থেকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে এমন গুজব বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মিল মালিকরা চাহিদার তুলনায় বাজারে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেন। এই সুযোগে কতিপয় অসাধু পাইকারি কিংবা খুচরা ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় তেল গুদামে লুকিয়ে রাখেন। যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে একের পর এক ধরা পড়ে। এই সংস্থাটি গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার ৩৭৮ লিটার অবৈধভাবে মজুদ করা তেল গুদাম থেকে উদ্ধার করে।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় পাহাড়তলী বাজারের বিল্লি লেইনের সিরাজ সওদাগরের দোকানের গুদাম থেকে ‘অবৈধভাবে’ মজুদ করা ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান চলাকালে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, রমজানের আগে কেনা এসব তেল সিরাজ সওদারগর গুদামে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু দোকানে তেল ছিল না। মোট ১ হাজার ৫০ কার্টুনে অন্তত ১৫ হাজার লিটার তেল তিনি গুদামে রেখেছিলেন।
ফয়েজউল্লাহ জানান, ঈদুল ফিতরের আগে কেনা দামে তেল খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া তেল মজুদ করায় সিরাজ সওদাগরকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার নগরীর ২ নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের খাজা স্টোরের নিচের গুদামে ১ হাজার লিটার তেলের খোঁজ পায় সংস্থাটি। পরে এসব তেল আশপাশের দোকানি ও ক্রেতাদের কাছে গায়ের দামে বিক্রি করা হয়।
এ অপরাধে খাজা স্টোরকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান ও নাসরিন আক্তার।
উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটের খাজা স্টোরে অভিযান চালিয়ে দোকানের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে গোপনে মজুদ করে রাখা ১ হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। মূলত অবৈধভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি লাভের আশায় এমনটা করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকারও করেছেন। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্কও করা হয়েছে। জব্দ করা তেল আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের পদাকানে বিক্রির জন্য বিতরণ করে দিয়েছি। অবৈধভাবে তেল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে এপিবিএন এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তাছাড়া গত শনিবার রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার বাগানবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের এক দোকানির বাসা থেকে ২ হাজার ৩২৮ লিটার তেল জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ফটিকছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আলমগীর। তাকে সহযোগিতা করেন স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা।