একুশ বছর পর মামলার রায় ঘোষণা আজ

22

১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর। রাত সোয়া ১২টা। মির্জাখীল দরবার সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন তিনি। এসময় স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র থেকে মুহুর্মুহু গুলি। গুলির গন্তব্য ছিল স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের শরীর। প্রাণঘাতি গুলি ও রক্তমাখা শরীর নিয়ে তিনি পালাচ্ছিলেন। কিন্তু এসময়ও সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি গুলি। দরবারের গেইটের সামনেই সন্ত্রাসীরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করল। দায়ের হল মামলা। দীর্ঘ ২১ বছর পর অবশেষে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আজ রোববার। চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একেএম মোজাম্মেল হকের আদালতে এ রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত রয়েছে।
এদিকে আদালত সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১০ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন গত ১১ নভেম্বর। ১০ আসামির মধ্যে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিনও রয়েছেন। জামিন বাতিল হওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- নেজাম উদ্দিন, মো. ইদ্রিস, জাহেদ, আবু মোহাম্মদ রাশেদ, ফারুক আহমদ, হারুনুর রশিদ, জিল্লুর রহমান, রফিক, ইমতিয়াজ প্রকাশ মানিক ও তাহের।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী এসইউএম নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৯৯ সালে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন হত্যা মামলায় ২১ বছর পর রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। আমরা আদালতের কাছে যথাযথ বিচার চেয়েছি।
এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য মতে, অপরাধ নির্মূল ও সন্ত্রাস দমনে প্রতিবাদী ভূমিকা রাখার ফলে একদল সন্ত্রাসীর টার্গেটে পরিণত হন চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা মতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা ১৫ মিনিটে মীর্জাখীল দরবার শরীফের ওরশ চলার সময় উত্তর গেইট সংলগ্ন নাছিরের চায়ের দোকানে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে চতুর্দিকে ঘিরে ধরে উপর্যুপরি গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর নিহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী সৈয়দা রওশন আকতার বাদী হয়ে ২০ জন আসামির নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে সাতকানিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিআইডির কাছে তদন্তের জন্য ন্যস্ত হয়। সিআইডি ২০০০ সালের ২২ ডিসেম্বর ২০ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয় (৩০২/৩৪
ধারায়)। এরপর বিভিন্ন আদালত ঘুরে সর্বশেষ দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির জন্য আসে।
এদিকে মামলার ১ নম্বর আসামি লুৎফর রহমান চৌধুরী মারা গেছেন। ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামিরা হলেন- বশির আহমদ, ইদ্রিস, তারেক, আইয়ুব, মোর্শেদুল আলম, আবদুল মালেক, জসিম উদ্দিন, খায়ের আহমদ ও মো. মোস্তাক। পলাতক বশির আহমদ একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। হত্যা, চাঁদাবাজি,
অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, নিরীহ মানুষের জমিজমা দখলের বিষয়ে বিভিন্ন
থানায় ১০/ ১২ টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সৈয়দা রওশন আক্তার জানান, ৩৪ বছর বয়সেই স্বামী হারিয়েছি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমাকে বিধবা করেছে। এখন ৫৫ বছর বয়সে মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমি ন্যায্য বিচার চাই আদালতের কাছে। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা চাই।