একুশের জন্য প্রস্তুত শহীদ মিনার নির্মাণে অগ্রগতি, নিরাপত্তায় শঙ্কা

21

ওয়াসিম আহমেদ
মহান একুশে ফেব্রæয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য প্রস্তুত শহীদ মিনার। সপ্তাহের মধ্যে রং তুলির আচড় আর সর্বশেষ সাজসজ্জার কাজও শেষ হবে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং নির্মাণাধীন ‘সাইট’ হওয়ায় জননিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। দুই-তিন দিনের মধ্যে বইমেলা অফিসে সভা করে এ একুশে নাকি স্বাধীনতা দিবসে শহিদ মিনার উন্মুক্ত করা হবে তা জানতে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করবেন, এ তথ্য পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন মেয়র নিজেই।
গতকাল মঙ্গলবার ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউটের নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন মেয়র। এ সময় কাজ দ্রæত শেষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।
এ সময় সিটি মেয়র বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউট। ঐতিহ্যবাহী এই জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কাজ দ্রæত শেষ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে প্রকল্পের সেরা মান এবং জননিরাপত্তা। এসময় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন প্রকল্প পরিচালক (উপ-সচিব) লুৎফর রহমান।
জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছিল, শহীদ মিনার অংশের সব কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে চায়। তখন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের কেউ কেউ আপত্তি জানালেও একই নকশায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাসে তারা রাজি হয়। পাশাপাশি এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবিও জানিয়েছিল তারা। গত বছরের ৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় পুরাতন শহীদ মিনারটি সংস্কার ও স¤প্রসারণ কাজ পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্মাণ কাজের জন্য পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলায় ৫ ফেব্রæয়ারি নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিকল্প একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই ২১ ফেব্রæয়ারি ও ২৬ মার্চ পালন করা হয়। তবে এবার শহীদ মিনার নির্মাণের মূল কাজ শেষ হলেও জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।
নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘নব নির্মিত শহীদ মিনারের কাজ প্রায় শেষ। রং লাগানো ও ফিনিসিং-এর কাজ চলছে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ তো চলমান, কমপ্লেক্স নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। নির্মাণাধীন সাইটে ২১ ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ২.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
ফেব্রæয়ারির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার একটি প্রসঙ্গ আসে। কেননা একুশের প্রথম প্রহরে লাখো মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাবে। তাই সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্তটি মেয়র মহোদয় নিবেন’। রাহুল গুহ আরও জানান, ‘থিয়েটার ইনস্টিটিউট অংশে রাস্তা বন্ধ থাকবে। কেননা ওই অংশে ভবনের পাইলিং-এর কাজ চলছে। তাই একমুখী সড়ক দিয়ে শহিদ মিনারে যাওয়া-আসা করতে হবে। রাতের বেলায় হওয়ায় একটু সতর্কতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ২১ ফেব্রæয়ারিতে না হলেও আগামি ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে শহিদ মিনার খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের’।
উল্লেখ্য, ২৩২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও ৮ তলা মিলনায়তন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জনের ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ হবে। মাঝের অংশে আগের মত শহীদ মিনারই থাকছে। ১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে। চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রæয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে সেখানেই কর্মসূচি পালন হয়ে আসছিলো।