একাদশে ভর্তি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভাব দূর করতে হবে

14

গত ২৮ নভেম্বর এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারে পাশের হার গতবারের চেয়ে কম হলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে অনেক। এছাড়া জিপিএ-৪ এর সংখ্যাও কম নয়। এ অবস্থায় জিপিএ-৫ ও ৪ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় যে কয়টি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা থেকে জিপিএ-৫ বা জিপিএ-৪ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ। এরফলে ভাল ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান পাবে না, নিরুপায় হয়ে ভর্তি হতে হবে অপেক্ষাকৃত কম মানসম্পন্ন কলেজে। যা শিক্ষার্থীদের চরমভাবে হতাশ করবে নিঃসন্দেহে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরবর্তী শিক্ষা জীবনে। একথাগুলো প্রায় প্রতিবছর সম্পাদকীয় স্তবকে লেখা হয়, দেশের শিক্ষাবিদরাও বলে থাকেন কিন্তু ‘যে লাউ সেই কদু’। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে, সরকারিকরণও হয়েছে তবে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়েনি। তাহলে এসব জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা কোথায় ভর্তি হবে? এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে বাড়বে সে নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে। আমরা লক্ষ করে আসছি, মাধ্যমিক স্তরের বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের শিক্ষাদানে অদক্ষতার বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও উচ্চমাধ্যমিক তথা কলেজের শিক্ষকদের দক্ষতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা সেভাবে আলোচনায় আসে না। দেশে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র কয়েকশ। চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি, বেসরকারি ও সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলে ১৫টির অধিক হবে না। এ তথ্য থেকেও দেশে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যার বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এর মধ্যে দুই লাখের অধিক জিপিএ-৫ রয়েছে। এক তথ্যে দেখা গেছে, এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরই পছন্দের প্রতিষ্ঠান শহর কেন্দ্রীক হওয়ায় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ নগরীর প্রতিষ্ঠান সমূহে আসন বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আসনের বিপরিতে যে হারে শিক্ষক প্রয়োজন তা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। ফলে আমরা দেখি নামকরা কলেজে ভর্তি হয়ে আত্মতৃপ্তি ঢেকুর তুললেও কাক্সিক্ষত ভালো মানের পাঠ তারা পায় না, ফলে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে ঝুঁকতে হয় কোচিং-এর দিকে। বস্তুত প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ অবস্থায় দেশে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কী করে উন্নীত হবে, এটা এক প্রশ্ন। এসব সমস্যা নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে ভর্তি কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে যাতে কোনো রকম জটিলতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ করা যায়, নতুন শিক্ষাবর্ষে এবং নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ আসে। নিয়মবহির্ভূত এসব অর্থ প্রদান করতে গিয়ে অনেক অভিভাবক দিশেহারা হয়ে পড়েন। এসব অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিক্ষাবিদদের মতে, দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি শিক্ষার মান। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিতে অদক্ষতার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জনের পরও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। এ থেকেও শিক্ষার মানের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনাসহ এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করার জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যদি আমাদের বিশাল জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে চাই, তাহলে শিক্ষার সব স্তরে মানউন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শিক্ষাখাতে সংযোজন-বিয়োজন অব্যাহত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষাখাতের অর্জন নিশ্চিত করতে দরকার যোগ্য, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য কেবল সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা যাতে অক্ষুণœ থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার লক্ষ্যে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বেতন-স্কেলের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু কার্যকর হচ্ছেনা কেন তা বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, শিক্ষার মানের সাথে শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি প্রাধন্য দিলে শিক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।