একদিনেই সড়কে প্রাণ গেল ৭ জনের

62

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গতকাল পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন। এর মধ্যে নগরীর ইপিজেড থানায় টিএসপি কমপ্লেক্স চত্বরে পুলিশ কর্মকর্তা, হাটহাজারী থেকে কক্সবাজার যাত্রাকালে যুবক, মিরসরাইয়ে ট্রাক উল্টে চালক, রাঙ্গুনিয়া ও বাঁশখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। এছাড়া চকরিয়া ও বান্দরবানে নিহত হন আরও ২ জন।
জানা গেছে, নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বেণুরাম নাথ (৪৮) নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। গতকাল শুক্রবার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার টিএসপি কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়।
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা দিকে টিএসপি কমপ্লেক্সের সামনে কাভার্ড ভ্যান বা লরির চাপায় একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। যতটুকু জেনেছি তিনি অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন। আর পথিমধ্যেই এই দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
তিনি আরও বলেন, নিহত পুলিশ সদস্যের লাশ তার বড় ভাই ও বোন জামাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ি এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে গাড়ি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
পূর্বদেশের হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারী থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল জয়নাল আবেদীন (২৩)। কিন্তু পটিয়ায় দ্রুতগতির একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া শান্তিরহাট সংলগ্ন বোর্ড অফিস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় আবদুল জব্বার (২০) নামে আরও একজন মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন।
নিহত জয়নাল আবেদীন হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিম দেওয়ানগর খেরু পাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং আহত আবদুল জব্বার একই এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের ছেলে।
শিকলবাহা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে হাটহাজারী থেকে ৮-১০টি বাইক নিয়ে একটি দল কক্সবাজার যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বোর্ড অফিস এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হন। এতে জয়নাল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, মিরসরাইয়ে নিজের ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মুসলিম উদ্দিন (৫০) নামের এক চালক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) মধ্যরাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের নিজামপুর কলেজের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুসলিম উদ্দিন জামালপুর সদর থানার বানিয়া বাজার এলাকার মৃত নজরুল ইসলাম প্রকাশ নজু শেখের ছেলে।
জানা যায়, দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের ঢাকামুখি অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ সময় যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশ পাশের বিকল্প রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করলে যানজট কমে আসে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি সরানো সম্ভব না হওয়ায় মহাসড়কের ঢাকামুখি লেনে ২০০ মিটার অংশে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আমিন বলেন, কারখানার ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল ট্রাকটি। মধ্যরাতে নিজামপুর কলেজ এলাকায় পৌঁছলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এরপর সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায় ট্রাকটি। এ সময় চালক জীবন বাঁচাতে দরজা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করলে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।
কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল্লাহ বলেন, নিজামপুর কলেজের সামনে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহযোগিতায় নিহত চালকের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাফ দিয়ে বাঁচতে গিয়ে নিজের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যান তিনি।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত যুবকের নাম মোজাম্মেল হোসেন (২৩)। তার পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালী হলেও ছোটবেলা থেকেই উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ছৈয়দুলখীল দক্ষিণপাড়া এলাকায় নানার বাড়িতে থাকতেন।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর সরফভাটা মেহেরিয়া মাদ্রাসায় নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
মো. হাসান নামে নিহতের এক স্বজন জানান, গত ১৮ মে বিকালে বন্ধুদের সাথে কাপ্তাই বেড়াতে যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল। মোটরসাইকেল যোগে যাওয়ার পথে কাপ্তাই সড়কের চন্দ্রঘোনা হাবিবের গোট্টা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজি অটোরিকশার সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোজাম্মেল সড়কে ছিটকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে প্রথমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায় মোজাম্মেল।
হাসান আরো জানান, নিহত মোজাম্মেল পিতা মোহাম্মদ রিয়াজ এবং মাতা বিলকিস আক্তারের একমাত্র সন্তান। সরফভাটা ক্ষেত্রবাজারের একটি ফুলের দোকানে চাকরি করে তিনি সংসার চালাতেন।
এদিকে বাঁশখালীর সাধনপুর জুমহুরিয়া মাদ্রাসা এলাকায় প্রধান সড়কে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নিহত হন। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর সাধনপুর ৮নং ওয়ার্ড বিচ্ছিন্না পাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের পুত্র। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি পালিয়ে যাওয়ার সময় সাহেবের হাট এলাকায় মো. আবছার (৩৮) ও আব্দুল মাজেদ (৫২) নামে আরো দুজনকে ধাক্কা দিয়ে আহত করে। এ সময় স্থানীয়রা গাড়িটি আটক করে ভাঙচুর চালায়। এলাকাবাসীর বিক্ষোভের কারণে রাতে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ দিক থেকে দ্রæত গতিতে ছুটে যাওয়া একটি ট্রাক গুনাগরীর দিকে যাওয়া জাহাঙ্গীরের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীর পেশায় একজন সার্ভেয়ার।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চকরিয়ায় মিনি ট্রাকের (পিকআপ) সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইমদাদ হোসেন (৩০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের বুড়ির দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইমদাদ হোসেন রাজধানী ঢাকার উত্তর খান এলাকার অহিদুর রহমানের ছেলে।
চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ মো. মুর্শেদুল আলম ভ‚ঁইয়া বলেন, গত সোমবার ঢাকার উত্তরখান এলাকা থেকে ছয়বন্ধু ৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তারা কক্সবাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে আবার ঢাকা ফিরছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বুড়ির দোকান এলাকা অতিক্রম করার সময় হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মিনি ট্রাকের (পিকআপ) সাথে মোটরসাইকেল আরোহী ইমদাদ হোসেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় মোটরসাইকেল আরোহী ইমদাদ হোসেন।
দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক পিকআপটি আটক করে। তবে চালক ও হেলফার পলতক রয়েছেন। নিহত মোটরসাইকেল আরোহী ইমদাদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানের থানচিতে বালু বোঝাই ট্রাক উল্টে গিয়ে মো. মুসা (৫৫) নামে এক চালক মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে বান্দরবান-থানচি সড়কের জীবননগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুসা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সামিয়ার পাড়ার বাসিন্দা। তার বাবার নাম সালেহ আহমদ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান সদর থেকে নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য ট্রাকে করে বালু নিয়ে যাচ্ছিলেন মুসা। পথে জীবননগর এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। এ সময় চালক মুসা ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে রাতে খবর পেয়ে পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ট্রাকে থাকা যাত্রী ও গাড়ির মালিক মো. সেলিম গুরুতর আহত হন। তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, বালু বোঝাই একটি ট্রাক থানচি আসার পথে গভীর খাদে পড়ে উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।