একটি মানবিক উদ্যোগ

30

এম.কামরুল হাসান চৌধুরী

“ মানবতার জয় হোক ”
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ক্রান্তিকালে যখন বিপর্যস্ত মানবতা। জীবন বাঁচাতে ভীতসন্ত্রস্ত দেশবাসী। এমনি এক কঠিন বাস্তবতায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাঝে ছিল ফটিকছড়িবাসী। এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে জনগণের দানে গড়া নব প্রতিষ্ঠিত ফটিকছড়ি ৩০ শয্যার কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতালটি। বর্তমানে তা স্থানীয় জনগণনের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নব উদ্যমের আশার আলো যোগাচ্ছে। উক্ত হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পেছনে একটু ইতিবৃত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিগত প্রায় তিন মাস পূর্বে উপজেলার অধিবাসী সচেতন মহলের কাছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা শুরু হতে থাকে একটি আপদকালীন হাসপাতাল গড়ার বিষয়ে। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। একপর্যায়ে তা স্থানীয় জনগণের প্রাণের দাবিতে রূপান্তরিত হয়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন নিয়ে প্রথম দিকে নানা জনের নানা মত প্রকাশ পায়। এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিভিন্ন সময়ে বিশিষ্ট জনদের নিয়ে কয়েকবার মতবিনিময় সভার ও আয়োজন হয়। আমার জানামতে এরকম কয়েকটি সভায় পৌর মেয়র মোঃ ইসমাইল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তবে, বেশির ভাগ জনমত আসে উপজেলার পরিত্যক্ত ২০ শয্যার হাসপাতালকে কেন্দ্র করে। এরমধ্যে এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সংবাদ প্রচার হতে থাকে।
মানবিক বিপর্যয়ের কঠিন বাস্তবতায় বেঁচে থাকার একটি অবলম্বনের মৌলিক বিষয়ে এত বেশি মানুষের আবেগ অনুভূতির এমন যোগসূত্র আগে কখনও কেউ দেখেছে কিনা, তা জানা নেই ! এতদঞ্চলের আপামর জনগণের আপদকালীন হাসপাতাল গড়ে তোলাার কারণটা খুব দ্রæত নজরে আসে বিভিন্ন মহলের। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে এই জনগুরুত্বপূর্ণ মানবিক বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সময়োপযোগী বাস্তবিক স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভাÐারীর নির্দেশনায় গত ৮ জুন, ২০২০ খ্রী: ফটিকছড়ি কোভিড-১৯ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রশংসিত হয় সর্বমহলে। তিনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় মানবিক সহায়তা দানের জন্য ফটিকছড়িবাসীকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এই বাস্তবায়ন কার্যক্রমে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তবে, তিনি হাসপাতালটি গড়ে তোলার জন্য সার্বিক সমন্বয় ও তত্তাবধানের দায়িত্ব প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। ইতিমধ্যে নানা প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের জন্য ফটিকছড়ি বাসীর কাছে ‘দেবদূতের’ ভুমিকায় আবির্ভূত হন চৌকস ও স্বনামধন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সায়েদুল আরেফিন। ফটিকছড়ির জনগণ কৃতজ্ঞ চিত্তে তাঁকে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রাখবেন আাজীবন।
“ফটিকছড়িতে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেনা কেউ” এই মানবিক সেøাগানকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে আগামী ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখ সকাল ১১ টায় শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জনগণের টাকায় গড়ে তোলা ফটিকছড়ি কোভিড ১৯ হাসপাতাল। ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় প্রায় ৭ লক্ষের অধিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের অঙ্গীকারে গড়ে ওঠা দীর্ঘ প্রতিক্ষিত আশা আকাক্সক্ষার স্বপ্ন পূরণের আর মাত্র কয়টা দিন বাকি। অর্থাৎ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৭ জুন কাংখিত স্বাস্থ্যসেবার দ্বার উন্মোচন হবে এবং পরবর্তী ২ আগস্ট রোগী ভর্তির দিনক্ষণও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফটিকছড়ি বাসীকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে, শয্যা খালি থাকলে অন্য এলাকার রোগীদের ভর্তির সুযোগ থাকবে বলে জানা যায় ।
উল্লেখ্য যে, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সম্পূর্ণ জনগণের অনুদানের টাকায় বাস্তবায়িত ফটিকছড়ি কোভিড-১৯ বিশেষায়িত ৩০ শয্যার হাসপাতালটি দেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম প্রতিষ্ঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ বেসরকারি করোনা স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা নাবিল চৌধুরীকে আহবায়ক করে নাজিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও অত্র উপজেলার কৃতি সন্তান ডা. জয়নাল আবেদীন মুহুরীকে সদস্য সচিব করা হয়। মূলতঃ তারা দেখভাল করবেন চিকিৎসা কার্যক্রম। ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৯ জন চিকিৎসক ১৫ জন নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। সাথে থাকবে আরো ২০ জনের মানবতাবাদী স্বেচ্ছাসেবী টিম।
বৃহত্তর ফটিকছড়ির আপামর জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দানের স্বপ্ন পূরণে প্রতিষ্ঠিত প্রাণের হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রমকে আরো সুদৃঢ় ও প্রসারিত করে যুগোপযোগী স্থায়ী ভিত্তি মজবুত করতে অবিলম্বে সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। এলক্ষে ফটিকছড়িবাসীর দরদি খ্যাত অত্যন্ত সুপরিচিতজন ও চট্টগ্রামের সাবেক বিভাগীয় কমিশনার এবং সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নবনিযুক্ত সুযোগ্য সচিব আব্দুল মান্নান মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
পরিশেষে, প্রাণের হাসপাতালের মানবিক সেবায় আপামর জনগণের স্বপ্ন পূরণের মাঝে প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটুক। স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য সাফল্য নিয়ে এগিয়ে যাক ফটিকছড়ি কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল। “সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ ভাল থাকুক প্রিয় ফটিকছড়িবাসী। মানবসেবার অবদান হোক সুমহান। এই প্রত্যাশায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা-ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টজন।

লেখক : শিক্ষানুরাগী সমাজকর্মী ও সংগঠক