একটি চক্র বাইরের ময়লা এনে অপপ্রচার চালাচ্ছে

64

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দীকি যীশুকে সতর্ক করেছেন মেয়র। নগরীর রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ যেন দেখা না যায়- এই বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। এসময় মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। পরিচ্ছন্ন বিভাগের ওয়ার্ডভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কর্মীদের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ কর্মী বেশি আছে। এখন কর্মীর স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আপনাদের সুপারিশে এসব পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। আপনারা তাদেরকে চাকুরি দিয়েছেন-চাকুরি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। তাদের থেকে কড়ায়-গন্ডায় কাজ আদায়ের জন্য কাউন্সিলরদেরকে আরো আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান মেয়র। তিনি বলেন, চসিকের সুনামকে ম্লান করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এই চক্রটি বাইরের ময়লা এনে নগরীতে ফেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে ।
এই কর্মকান্ড সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন মেয়র।
গতকাল রবিবার সকালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত পরিষদের ৪৮তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেমসহ নগরীর সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন চসিকের সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী।
সিটি মেয়র আরো বলেন, আগামি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করার দিকনির্দেশনা দেন মেয়র। আসন্ন ঈদুল আযহা উদ্যাপনে সরকারের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, নগরীর কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ঈদের দিন বিকাল ৪ টার মধ্যে পুরো নগরীতে কোরবানীর দিন জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং ঈদের পরের দিন শেষ রাত পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে ৪১টি ওয়ার্ডকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম-৪টি জোনে বিভক্ত করে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৪টি ‘উপ-কমিটি’ এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। ঐদিন পরিচ্ছন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিশ্চিতকল্পে কোরবানি ঈদের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে দায়িত্বে নিয়োজিত স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মীদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সমস্ত কার্যক্রম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা তদারকি করবেন।
ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এখনো চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। একবার এই ডেঙ্গু রোগ দেখা দিলে মহামারি আকারে ধারণ করবে বলে তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন। মেয়র বলেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে গত ১৫ জুলাই ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিদিন ১৬১ জন কর্মী নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ও বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিস্কার ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা বংশবিস্তার করে, সেখানেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ সব বহুমুখী কর্মসূচির কারণে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই চট্টগ্রামে।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড থেকে বয়স ভিত্তিক নিজস্ব খেলোয়াড় বা বাহির থেকে খেলোয়াড় সংযুক্ত করার বিষয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে অবহিত করার জন্য আহŸান জানান মেয়র। সভায় অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন, নগরীর কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনা, সবুজ মেলার আয়োজন, ঈদ জামাত ও মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন, অতি বৃষ্টিতে নগরীতে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার জরিপ, আয়বর্ধক প্রকল্প ও ২৪ জুলাই আরাকান সড়কের উদ্বোধন সম্পর্কে আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এছাড়া সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, বর্জ্য, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য রক্ষা, জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ, আইন শৃঙ্খলা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, যোগাযোগ, দারিদ্র হ্রাসকরণ ও বস্তি উন্নয়ন, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, হিসাব নিরীক্ষা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি ও বিদ্যুৎ, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার বিষয়ক স্ট্যান্ডিং ও নামকরণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন।
শেষে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলমের সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন চসিক মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা হারুন-উর-রশিদ চৌধুরী।