এইট পাশ আর মেট্রিক ফেল দিয়ে উন্নয়ন হয় না : প্রধানমন্ত্রী

32

ঢাকা প্রতিনিধি

আওয়ামী যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত যুব মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশটি আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, এইট পাশ আর মেট্রিক ফেল দিয়ে উন্নয়ন হয় না। তিনি রিজার্ভ নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিয়ে বলেন, দুঃসময়ে রিজার্ভ কাজে লাগাতে হয়। এছাড়া তিনি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহবান জানান এবং বলেন, দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।
মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে কোন দুর্ভিক্ষ হবে না- ইনশাআল্লাহ। তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশাআল্লাহ হবেও না।
মহাসমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না’। আমিও বিশ্বাস করি কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ^বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, আমাদের আমদানি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের পরনির্ভরশীল থাকলে হবে না, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। তাই আমি আহবান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপি রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, কিন্তু ৯৬ সালে তিনি যখন সরকার গঠন করেন, এর আগের বিএনপি সরকার রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে তার সরকার করোনাকালিন ৪৮ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ উন্নীত করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে খাদ্য শস্য, করোনার টিকা এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়েছে।তারপরেও ৮ বিলিয়ন আমরা আলাদাভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। কেননা রিজার্ভতো জমিয়ে রাখলে হবে না, দুঃসময়ে সেটাকে কাজে লাগাতে হয়। সরকার নিজেদের অর্থে বিমান ক্রয় করেছে এবং বাংলাদেশ বিমান এ টাকা ঋণ নিয়েছে এবং ২ শতাংশ সুদে ফেরত দেবে।
বিএনপি সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই এইট পাশ আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চালালে সেই দেশের উন্নতি হয় না। দেশপ্রেম থাকলে দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকলে এটা করা যায় আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর ৯৬ সালে আমরা যখন সরকারে আসি বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাই। মাঝখানে আট বছর বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এরপর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ যখন সরকার গঠন করি। এই ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে এখন আর কেউ আন্তর্জাতিকভাবেও অবহেলার চোখে দেখে না। প্রত্যেকেই বলে আজকে বাংলাদেশ এতো ঘাত প্রতিঘাতের পরও আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা টাকা দেশের জনগণের কল্যাণ ব্যবহার করছি। অর্থনীতিকে গতিশীল করাই আমাদের লক্ষ্য। তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় ছিল- দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার হাজার টাকা কামাই করে বিদেশে গিয়ে এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে। আমার কথা হলো- বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা সেটা কেউ রুখতে পারবে না।
বিএনপি নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিংয়ের কথা বলে, লুটপাটের কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে। আমি যুবলীগের নেতাকর্মীদের জানাতে চাই- তারেক জিয়ার শাস্তি হয়েছে মানিলন্ডারিংয়ের কেসে। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআই’র লোক এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছর সাজা, বিশ কোটি টাকা জরিমানা; গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত; দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির জন্য সে সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতাই হচ্ছে খুন-মানিলন্ডারিং-অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি; তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। জিয়া ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করেছিল।
যুবলীগকে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুবকদের দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। আমাদেরকে দেশের সেবা করতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে। করোনার সময় কৃষক যখন ধান কাটতে পারছিল না, তখন যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন। যুবলীগ লাখ লাখ বৃক্ষ চারা রোপন করেছে, সেভাবেই এখনো আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম। সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল।
কাদের বললেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব গিলে খাবে : মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দলটির নেতাকর্মীরা বিদেশি ঋণ, গণতন্ত্র এমনকি সুযোগ পেলে বাংলাদেশকেও গিলে খাবে।

বিএনপিকে পাকিস্তানের এজেন্ট বললেন শেখ সেলিম : আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল না, তারা পাকিস্তানের এজেন্ট। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা কিসের দল? যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র শেখায়। কিসের গণতন্ত্র? মুচলেকার গণতন্ত্র। ৫০০ লোককে যারা হত্যা করেছে, যাদের বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ব নেই, তারা এটা করতে পারে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন নেক্সট এশিয়ান টাইগার : যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বিএনপির সময় বাংলাদেশকে বলা হতো ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড অব টেরোরিজম’। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে ‘নেক্সট এশিয়ান টাইগার’। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রক্ষা করতে পরবেন। এ সময় সরকার প্রধান বিশ্বের সেরা ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত।

যুবসমুদ্রে পরিণত মহাসমাবেশ : যুব মহাসমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক। পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়। উদ্যানের বাইরে টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। মহাসমাবেশ যুবসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

সমাবেশস্থলে ঢুকতেই পারেনি লাখো কর্মী : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ শুরু হয় গতকাল দুপুর আড়াইটায়। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এসে পৌঁছান, চারদিক থেকে মিছিল শ্লোগানে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল। এ সময় সোহরাওয়ার্দী ঢুকতে অপেক্ষমাণ ছিলেন লাখো কর্মী-সমর্থক। কিন্তু সময় মতো তারা মাঠে ঢুকতে পারেননি। ক্ষোভ দেখা গেছে তাদের মধ্যে।