এইচএস কোডের ভুলের বিষয়ে শিগগিরই পজিটিভ আদেশ জারি

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, পণ্য আমদানিতে এইচএস কোডের ভুলের বিষয়ে শিগগিরই পজেটিভ আদেশ জারি করা হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির গতি ও কার্যক্রম সন্তোষজনক। তবে বর্তমান জনবল দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে নেট কর বাড়ানো কঠিন। এরপরও সীমিত জনবল দিয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, হোল্ডিং নম্বর ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে কর আদায়ের চেষ্টা করছি। এখন করদাতার সংখ্যা ৩১ লাখে উন্নীত হয়েছে। রিটার্ন সহজ করছি। ভ্যাটদাতার সংখ্যা ৪ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, বিজিএমইএ ডাইভার্সিফাইড প্রোডাক্ট তৈরির কথা বলছে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা এত পোশাক রপ্তানি করি আমাদের একটি নিজস্ব ব্রান্ড হলো না কেন! গবেষণায় অর্থ ব্যয় করতে হবে। ব্রান্ডিংয়ের চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্ব বিশেষ অতিথি এনবিআর সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ঢাকার বাইরে সবচেয়ে ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব চট্টগ্রামে পেয়েছি। আয় বাড়লে ভ্যাট কমানো যায় কিনা এনবিআর চিন্তা করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ ও বাধাহীন করতে আমরা চেষ্টা করছি।
ড. শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, করযোগ্য সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব এনবিআরের বিবেচনায় আছে। ইতিমধ্যে রিফান্ড দ্রæত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। নোটিশ অনলাইনে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আকারে করা হবে। কর দেওয়ার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। এখন কর প্রশাসন অনেক গতিশীল ও ডিজিটাল।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, আইন ব্যবসার গতি প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে সংযোজন বিয়োজন করা হয়। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে কাজ করছি। ভ্যাট আদায়ে তিন লাখ ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়াতে হবে তেমনি যারা রাজস্ব জোগান দেন তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভ্যাট, শুল্ক ও কর বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম প্রবর্তন, অগ্রীম কর বা ভ্যাট সমন্বয় করে দ্রæ রিফান্ড করা, এইচএস কোড সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপণের জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেন।
চেম্বার সভাপতি বলেন, পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোডে অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে প্রায় ২০০-৪০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। পণ্যের বিবরণ যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে এইচএস কোডের অনিচ্ছাকৃত ভুলে জরিমানা না করা, রপ্তানি খাতকে আরো সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণে গবেষণা খাতের বিনিয়োগকে করমুক্ত করার সুপারিশ করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
এসময় প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিজিএমইএর ১ম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি মো. আবু মোরশেদ চৌধুরী, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ, আবাসন খাতে রিহ্যাব-চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, জাহাজভাঙা শিল্পের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার, শিপ রিসাইক্লিংয়ের পক্ষে নওশির হাসান, চিটাগাং ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মো. নুর হোসেন, বিজিএপিএমইএর পরিচালক তৌফিকুল আলম, লুব-রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউসুফ, বিএসআরএমের শেখর রঞ্জন কর, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আশরাফ হোসেন মাসুদ, মটর পার্টস অ্যান্ড টায়ার টিউব মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের লিয়াকত আলী চৌধুরী, রাবার-গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী, জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, রিলায়েন্স এস্টেস্ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টস (বিডি) লিমিটেডের পরিচালক ওমর মুক্তাদির ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবসায়ী গ্রুপের এম ইলিয়াছ খান আইয়ুব।
সভায় বক্তারা এইচএস কোড জটিলতা নিরসন, বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা করা, নারী উদ্যোক্তাদের আয়কর সীমা ও এসএমই খাতে জামানতহীন ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা করা, সব কাস্টমস স্টেশনে একই পণ্যের সমমূল্যে শুল্কায়ন নিশ্চিত করা, রাজস্ব আইন পরিবর্তনের কমিশন গঠন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখা, আগাম করের ক্ষেত্রে দ্রুত রিফান্ড, ভ্যাট সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সীমা নির্ধারণ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিরেকে শুধু মূসক ৬.৩ এর মাধ্যমে আসবাবপত্র বিপণনের সুযোগ প্রদান, লবণ শিল্পের উন্নয়নে হাইটেক প্রযুক্তি আনায়নে শুল্কমুক্ত রাখা, বিষমুক্ত অর্গানিক শুঁটকি উৎপাদনে কর অবকাশ সুবিধা, ভ্যাটের হার কমিয়ে সর্বস্তরে চালু করা ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের জনবল বৃদ্ধির দাবি জানান।