এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ চট্টগ্রামে বাড়েনি পাসের হার

115

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে এবার পাসের হার প্রায় স্থির রয়েছে। তবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এবার এ বোর্ডের পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ হিসেবে পাসের হার শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। এবার গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৪৭ জন। এসব শিক্ষার্থীর ৮৮ শতাংশই নগরীর বিভিন্ন কলেজের।
পরীক্ষার ফলাফলে বরাবরের মতোই গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। অনুন্নত অবকাঠামো ও দক্ষ শিক্ষক সংকটের কারণে গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান।
এবার বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার বাড়লেও কমেছে সামগ্রিক পাসের হার। তার জন্য ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও ইংরেজিতে বিষয়ে কম পাসের হারকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে পাসের হারে ছাত্রীরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ এর হিসেবে রয়েছে পিছিয়ে।
গতকাল দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলন করে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান। এ সময় তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফল গতবছরের চেয়ে তেমন হেরফের হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার সাত শতাংশ বাড়লেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় তা কমেছে তিন থেকে চার শতাংশ করে। এ বছর বোর্ডে বিজ্ঞান শাখায় ফলাফল আগের বছরের চেয়ে ভালো হলেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় খারাপ হয়েছে। কেননা তাদের ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পাসের হার কমেছে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, আইসিটিতে এ বছর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ পাস করলেও মানবিকে ৭৪ দশমিক ২০ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৮৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া ইংরেজি বিষয়ে মানবিক বিভাগের ৬৬ দশমিক ৩৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৮০ দশমিক ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। অবশ্যিক এ বিষয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন ৯৭ দশমিক ০৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী।
এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৯৮ হাজার ৯২৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ২ হাজার ৮৬০ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর ৮৮শতাংশই নগরীর বিভিন্ন কলেজের। ফলে বরাবরের মতেই পিছিয়ে রয়েছে গ্রামের কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনুন্নত অবকাঠামো ও অপর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষকের কারণে তাদের এমন হাল বলে দাবি করেছেন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে ছাত্রীদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ১১ শতাংশ। যা ছাত্রদের তুলনায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আবার ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৪৪৮ জন, যা ছাত্রীদের তুলনায় ৩৬ জন বেশি।
এ বছর নগরীতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পাসের হার গতবারের চেয়ে প্রায় চার শতাংশ কমে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
কক্সাবাজারের ফলাফলে বেশি হেরফের হয়েছে। জেলাটিতে এ বছর পাসের হার কমেছে গতবছরের চেয়ে সাত শতাংশ। এ বছর এ জেলা থেকে পাস করেছে ৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গতবছর ছিল ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
রাঙামাটিতে গতবারের ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ পাসের হার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। বান্দরবানে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, গতবার ছিল ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে খাগড়াছড়িতে পাসের হার বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এ বছর এ পার্বত্য জেলাটি থেকে পাস করেছেন ৪৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর ছিল ৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুব হাসান জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া দুই হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নগরের দুই হাজার ৫১৯ জন, যা মোট জিপিএ-৫ এর ৮৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম নগরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ২৪১ জন। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে ৫৬, রাঙামাটি থেকে আট, বান্দরবান থেকে ২১ ও খাগড়াছড়ি থেকে ১৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

উচ্চমাধ্যমিকের
ফলাফল যথেষ্ট
ভালো : প্রধানমন্ত্রী

উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হার বেড়েছে; সার্বিকভাবে পাস করেছে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। দ্বাদশ শ্রেণির গÐি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন। সেই হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার পরীক্ষা হয়েছে ‘সুন্দর’ পরিবেশে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকল সর্বোতভাবে বন্ধ হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি প্রতারণা কিংবা গুজবের সৃষ্টি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ পাসের হারকে ‘যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও ভালো’ ফলাফল হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলে ধীরে ধরে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। সেটা আমার বিশ্বাস। কারণ আমি মনে করি ছেলেমেয়েরা ফেল করবে কেন? আমরা কতগুলো উদ্যোগও নিয়েছি যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগী হয়।
যারা এবার পাস করেছে তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। আর যারা পাস করতে পারেনি তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মন খারাপ করার কিছু নেই, আবার পরীক্ষা দেবে। এখন তো আরেকটা সুবিধাও আমরা করে দিয়েছি নীতিমালায়। একটা বা দুটো বিষয়ে যদি ফেল করে সেগুলোই আবার দিতে হবে, পুনরায় সব পরীক্ষা আবার দিতে হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমারা এ সুযোগগুলো সৃষ্টি করে দিয়েছি যতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পাস করে, তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, স্বউদ্যোগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, এবং বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারে। খবর বিডিনিউজের
চলতি বছর ১ এপ্রিল থেকে ২৩ মে দেশের দুই হাজার ৫৬০টি কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমানের লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা চলে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দশ শিক্ষা বোর্ডে এবার সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে এইচএসসিতে আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ হাজার ৮০৭ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে এবার পাস করেছে ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ২ হাজার ২৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
আর কারিগরি ও ভোকেশনাল বোর্ডে পাসের হার এবার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। আর ৯০৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা শেষ হয়।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হিসাব
সেরা ১০ প্রতিষ্ঠানের
নয়টিই নগরীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৭৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫৫ জন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। এ কলেজ থেকে ১ হাজার ৭৬৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩৪ জন শিক্ষার্থী। একইভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি সিটি কলেজ। এ কলেজ থেকে ২ হাজার ১৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২১ জন শিক্ষার্থী। তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের নাম। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৫৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫০ জন। পঞ্চম স্থানে থাকা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এবার ১ হাজার ২৮০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭৩ জন। তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৭ জন। সপ্তম স্থানে থাকা ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৪৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩ জন। অষ্টম স্থানে রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪ জন। নবম স্থানে থাকা পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬১ জন। এছাড়া দশম স্থানে থাকা হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজ থেকে ১ হাজার ৮৮০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৫ শিক্ষার্থী।