ঋষিধামে বসবে ভক্তদের মিলনমেলা

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

অশুভকে পিছনে ফেলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন ঘটাতে মহা সমারোহে শুরু হতে যাচ্ছে ২১তম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১১ দিনব্যাপী মিলনমেলা বসবে বাঁশখালী ঋষিধামে। পূর্ণকুম্ভের অনুসরণে যুগাবতার শিবকল্পতরু শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ প্রবর্তিত বাংলাদেশের একমাত্র ঋষিকুম্ভ মেলাকে ঘিরে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। উৎসব সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে কুম্ভমেলা উদযাপন পরিষদ। গতকাল গঠন করা হয়েছে ৪৩টি উপ-কমিটি।
১১দিনব্যাপী মেলায় প্রায় ২৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বাজেটের এ উৎসবে দেশ-বিদেশ থেকে বহু সাধু-সন্নাসী আসবেন। ঋষিকুম্ভকে ঘিরে ঋষিধাম প্রাঙ্গনের ভেতর-বাহিরে বসে প্রায় দেড় হাজার দোকান নিয়ে প্রাণের মেলা। যে মেলা সকল ধর্মের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।ঋষিকুম্ভ উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুকুমার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, প্রতি তিন বছর পরপর ঋষিধামে ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ এ মেলায় উপস্থিত হয়। ঋষিকুম্ভকে ঘিরে মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দেড় হাজার দোকানি আসে। শ্রীশ্রী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ প্রবর্তিত এই উৎসবের উপমহাদেশজুড়ে সুনাম আছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ১-২ ফেব্রæয়ারি বসবে সাধু সন্নাসীদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে সনাতনী সম্প্রদায়ের বড়বড় সাধু সন্নাসীরা উপস্থিত থাকেন। ঋষিকুম্ভ মেলায় অসাম্পদায়িক চেতনা ফুটে উঠে। সেখানে সকল ধর্মের মানুষের আনাগোনা ঘটে। ঋর্ষিকুম্ভ ও মেলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে ৪৩টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্বের বেশিরভাগ কমিটি বহাল রাখার পাশাপাশি কিছু নতুনত্বও রাখা হয়েছে।
জানা যায়, কুম্ভ অর্থ মঙ্গল। কুম্ভ পূর্ণতা ও পবিত্রতার প্রতীক। ঋষিরাই হচ্ছেন ঐক্য, সংহতি ও সংস্কৃতির প্রতিক। কুম্ভযোগে বা কুম্ভপর্বে ঋষিদের সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয় বলেই এর নাম কুম্ভমেলা রাখা হয়। অষ্টম শতাব্দিতে পৃথিবীর সর্বাধিক গৌরবময় স্থান হিসেবে হরিদ্বার, উজ্জয়নী, নাসিক, প্রয়োগ এই চারটি স্থানেই কুম্ভপর্বের সূচনা হয়েছিল। তিনটি স্থানে তিন বছর পরপর এবং হরিদ্বারে ১২বছর পর একবার কুম্ভ মেলা হয়। এ মেলায় গরীব ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মানুষরা যেতে পারে না বলেই বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের গুনাগরী ঋষিধামে ঋষিকুম্ভ মেলার প্রবর্তন ঘটেছিল। ভারতবর্ষের মহা কুম্ভমেলায় গিয়ে পূণ্যার্থীরা যতটুকু কৃতার্থ হয় ঋষিকুম্ভে মেলায় গিয়ে কিংবা নাম শ্রবনে তার সমান কৃতার্থ হয়। এবারের ঋষিকুম্ভেও রাষ্ট্রীয় অতিথিবর্গ, বিদেশী কুটনীতিকসহ দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ধর্মীয় প্রবক্তরা উপস্থিত থাকবেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রা : আগামী ২৭ জানুয়ারি সকালে অনুষ্ঠিত হবে মহাশোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সস্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী বিরেন শিকদার, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ। সকালের এই শোভাযাত্রায় বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়িযোগে ঋষিধামে গিয়ে প্রচুর মানুষ যোগ দেন। পুরো অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন ঋষিধাম ও তুলসিধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ।
সমন্বয় সভা আজ : ঋষিকুম্ভ মেলার সপ্তাহখানেক আগেই সমন্বয় সভায় বসছে প্রশাসন। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা সফল করতে এ বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন কুম্ভমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুকমার চৌধুরী। এবার নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে কিছুটা বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তাও এ সভা থেকে নিরসন হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
সুকুমার চৌধুরী বলেন, ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। একটি পক্ষ সেখানে মেলা নিয়ে প্রতিবছর বাণিজ্য করে। তারা মেলা থেকে টাকা নিয়ে মন্দিরে দেয়নি। কমিটিতে থেকে একটি পক্ষ এই অপকর্ম করতো। সব বিষয়ে শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ সমাধান দিয়েছেন।
কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনম শাহদাত আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক ঋষিকুম্ভমেলার সফলতা কামনা করি। এটি শুধু বাঁশখালীর নয়, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। এটির জন্য বাঁশখালীবাসী সর্বোপরি কালীপুরের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি গর্বিত। প্রতিবারের মতো এবারও অসাধ্য সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি কুম্ভমেলাকে ঘিরে সনাতনী ভাইদের ভেতর যে মনের অমিল আছে বলে মনে হচ্ছে সেটি যাতে সমাধান হয় এবং সুন্দর সমাপ্তি ঘটে এ কামনা করছি। এক্ষেত্রে একজন চেয়ারম্যান ও অসম্প্রদায়িক একজন মানুষ হিসেবে আমার পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’