ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট

33

গত ২০ বছরের ব্যাংকের ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে তা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে কী পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তা নির্ণয়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠনের জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।এক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
রিটের শুনানির সময় আদালত বলেন, বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে এরইমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি খুব দ্রæত বন্ধ করতে হবে। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদÐ, অর্থ তেমনই একটি দেশের মেরুদন্ড, যার ওপর দেশ দাঁড়িয়ে থাকে।
আদালত আরও বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকে নিয়ম-নীতি মেনে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। যদি তা না-মানা হয়, যারা যারা ঋণ গ্রহণ ও অর্থপাচার করেছেন, তাদের তালিকা এবং তাদের আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার করে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। এছাড়া, ওই আত্মসাতের অর্থ দেশ কিংবা বিদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তা ফিরিয়ে আনতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
পরে ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন। একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেই তালিকা দাখিলের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ আদালত এখনও জানাননি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয়ে তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও নোটিশপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের বিষয় তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রনয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশের কোনও সদুত্তর না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।