ঊর্ধ্বমুখী বাজারদর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

55

বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে নিত্য দুঃসংবাদের অন্ত নেই । ভরাবাজারে অথবা সংকটকালে নানা অজুহাতে অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ আসার পরও এদের বিরুদ্ধে কোন কঠোর আইন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণ লাগামহীন হয়ে পড়েছে। আলু এবং পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর আহবান ও দর নির্ধারণ করে দেয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েও কোন ফল না পাওয়ায় একমাত্র কারণ অসাধুরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়া। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের যাপিতজীবনে নানা ছন্দপতন ঘটছে। দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে। বিশেষ করে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশের গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা খুবই নাজুক, এরমধ্যে শাকসবজি থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মূল্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এ পরিণত হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, কোন কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পরও তা আর নিম্নমুখী হওয়ার আর কোন নজির নেই । পরবর্তীতে সরকার ও প্রশাসন এ নিয়ে কঠোর অবস্থানে গেলে দাম নিয়ে পাইকারি-খুচরা, আমদানিকারক-মকামির লোকোচুরি খেলায় দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী। অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যম্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬.৪৪ শতাংশ। আর খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭.৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। সামপ্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এত বেশি হারে বাড়েনি। বাজারে আলুর দাম বাড়তে বাড়তে প্রচলিত বাজারমূল্যের দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শীত চলে এলেও বাজারে শাকসবজির দাম এখনো অতিরিক্ত। ভোজ্য তেলের দাম চড়ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, খুচরায় খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা লিটার এবং পাম ১০০ টাকা লিটার দরে। বোতলজাত তেলের দামও লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম আগেই রেকর্ড ভেঙেছে। বাজারে চলতি সপ্তাহেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। সাধারণ মানের এক কেজি মিনিকেট চাল কিনতে লাগছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। একটু ভালো মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল কিনতে লাগছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ব্রি আটাশ চালের দাম গত সপ্তাহে বেড়ে কেজিপ্রতি ৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল। এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্বর্ণা, পাইজামসহ মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকার ওপরে।
আগাম সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। চাহিদা ও জোগান নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিভাবে সামাল দেয়, সে ধারণাও সামনে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত মজুদের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারত একটি বিকল্প বাজারব্যবস্থা। টিসিবিকে আরো সক্রিয় করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। গ্রামপর্যায়ে বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা কি খুবই কঠিন কোনো কাজ? কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সেদিকে কোনো দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের লাভ ও লোভের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা গেলেও বাজার হয়তো এভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতো না। কিন্তু বাজারে নিয়মিত নজরদারি ও তদারকি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যেন অনীহা যথাযথ কর্তৃপক্ষের। বাজার স্থিতিশীল রাখা, ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরের কারণে সাধারণ মানুষের একপ্রকার নাভিশ্বাস উঠে গেছে। করোনার কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, আয় কমে গেছে অধিকাংশ মানুষের। স্বল্প আয়ে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট নতুন ব্যয়। এ অবস্থায় আমরা সরকার ও প্রশাসনের নিত্যপণ্যের বাজারের প্রতি গভীর মনোযোগ ও কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। মনে রাখতে হবে দেশে গুটিকয়েক অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর চেয়ে সাধারণ গ্রাহকের সংখ্যা শতগুণ বেশি। সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবে তাতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষগুলোর জীবন-মান দেখা দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের মধ্যে পড়ে।