উৎসব-আড্ডায় প্রাণবন্ত এলামনাইদের মিলনমেলা

179

‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়,’ শৈশব আর কৈশোরের ফেলে আসা সেই সব স্বর্ণালী দিনকে খুঁজে পাবার নেশায় গত ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি আগ্রাাবাদ সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন দু’দিনব্যাপি আয়োজন করেছিল পুরনো স্মৃতি রোমন্থন, গান-গল্প আর জমজমাট আড্ডাবাজির। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম আগ্রাাবাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের, সাফল্য আর গৌরবের বাতিঘর আগ্রাাবাদ সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। এলামনাইদের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান ছিল ফেলে আসা সেই প্রিয় স্কুল প্রাঙ্গনে। বসন্তের সুবাস ছড়িয়ে সেদিনের সেই সকালটি অন্য অনেকের কাছেই সাদামাটা মনে হলেও স্কুলের প্রাক্তনদের চোখে ছিল পূর্ণ বসন্ত, মনে ছিল নানা রঙ আর ভাবনায় ছিল মিলন উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রানের মেলায় পুরনো ভালোবাসা আর অনেকদিনের দেখতে না পাওয়া প্রিয় শিক্ষক, সতীর্থ, সিনিয়র-জুনিয়রদের মুখ দেখতে পারার উদ্গ্র বাসনা! যে কারনে আগের রাতে অনেকেরই বিনিদ্র রজনী যাপন! আগ্রাাবাদ, সিজিএস কলোনি সহ আশেপাশে যে প্রান্তেই চোখ গেছে, দেখা গেছে শুধুই এলামনাই পরিবারের প্রিয় সতীর্থদের মুখ। মূল অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত ও স্কুলের প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এবং স্কুল এলামনাই এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগমের মায়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এলামনাইদের এই আয়োজন কে নিজেদের মতো করে রাঙ্গাতে প্রায় প্রতিটা ব্যাচ গত প্রায় মাসখানেক ধরে আলোচনা-মিটিং করেছেন কিভাবে ব্যাচের প্রাক্তনদের বেশি করে পুনর্মিলন ঘটানো যায় আর নিজেদের মতো করে আরও জমজমাট আড্ডাবাজি করা যায়! এরই ধারাবাহিকতায় সকালের অনুষ্ঠান, উৎসব আর র‌্যালি শুরুর আগে পুরো স্কুল প্রাঙ্গন যেন পেয়েছিল অন্য এক রুপ! রংয়ে-ঢংয়ে, আড্ডাবাজি, হুলে­াড় আর একসাথে বন্ধুদের পেয়ে সকাল থেকেই নষ্টালজিক সকলে!
ওদিকে বিভিন্ন ব্যাচ প্রানে প্রাণ মেলাতে আর নিজেদের মতো করে পুরনো বন্ধুকে কাছে পাওয়ার আনন্দ উপভোগের জন্য আবার মূল অনুষ্ঠানের শেষে সন্ধ্যায় বেছে নিয়েছিলেন শহরের বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টকে। তাঁদের এই এক সাথে হারানো বন্ধুকে কাছে পাওয়ার আনন্দ আরও রঙ্গীন করেছে মূল অনুষ্ঠানের টি-শার্ট ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাচের বর্ণিল টি শার্ট আর মেয়েদের উজ্জ্বল শাড়ি!
এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে এলামনাইদের লেখায় আর কিছু এলামনাই’র অক্লান্ত পরিশ্রম ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ম্যাগাজিন “স্মরন বেদনায় ঘন্টা”!
বর্ণাঢ্য র‌্যালি, স্মৃতিচারণ আর জমজমাট গানে আনন্দ বহুগুন
ভোরের আলো ফুটতেই যেন নগরীর মূল আগ্রাাবাদ বাদামতলি সড়ক থমকে দাড়িয়েছিল! স্কুল প্রাঙ্গন হতে বিচিত্র রঙ আর ঢংয়ে, বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের গায়ে বর্ণিল টি শার্ট , বাঁশি আর বাহারি বিভিন্ন উপকরনে বের হওয়া র‌্যালি নজর কেড়েছে পুরো আগ্রাাবাদবাসীর। র‌্যালির অগ্রভাগ যখন বাদামতলি তখনও শেষ ভাগ স্কুলের গেইটে!
র‌্যালিতে অংশ নেওয়া এলামনাইদের ভাষায়, “এত বড় র‌্যালি আগ্রাাবাদসহ পুরো চট্টগ্রামে আর কোন বিদ্যালয়ে নিকট অতীতে হয়েছে কিনা আমাদের সন্দেহ!” ঢাকা সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক এলামনাইরা এসেছেন র‌্যালি শুরু’র একটু আগে, এসেই তাঁরা র‌্যালিতে সামিল হয়েছেন। আর র‌্যালিতে তাঁদের বাহারি রঙ আর ঢং দেখে মনেই হয়নি তাঁরা ভ্রমনজনিত কারনে ক্লান্ত! র‌্যালি শেষে দিনভর স্কুল প্রাঙ্গনেই বিভিন্ন ব্যাচের স্মৃতিচারণা আর গানে সতীর্থরা মেতে উঠে নির্মল আড্ডায়।
পরদিন ২৩ ফেব্রæয়ারি। দুপুর গড়াতেই নষ্টালজিয়া আক্রান্ত এলামনাইদের গন্তব্য ছিল আগ্রাাবাদ শিশু পার্ক অভিমুখী, যেখানে জমেছিল জমকালো মিলনমেলা। সেদিন সকাল থেকেই প্রাক্তনদের সকলেই ভীষন উদগ্রীব ছিলেন কখন দেখা হবে আবার সেই চিরচেনা বন্ধু-সতীর্থের মুখ আর হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকে আবার নতুন করে পাওয়ার সুখ! বিকেলের সোনালী আলোতে ঘিয়ে ভাজা জিলাপি আর ডালপুরি খেতে খেতে আড্ডাবাজিতে সকলেই যেন ফিরে গেলেন তাঁদের সোনালী অতীতে। আর মায়াবী সন্ধ্যায় আতশবাজি, ম্যাক্সেল রানা’র জমজমাট গান সাথে এলামনাইদের বাঁধনহারা নৃত্য, চিরকুট ব্যান্ডের গান, র‌্যাফেল ড্র আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানসহ আগ্রাাবাদ স্কুল এলামনাই কর্তৃপক্ষের আয়োজনটি ছিল সত্যিকার অর্থেই মনে রাখার মতো, অনেক গোছানো আর প্রাণবন্ত।
এভাবেই ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসে বিদায়ের ক্ষন, অবসান হলো জমজমাট মিলনোৎসব। কিন্তু, সকলেই নিশ্চিত, প্রানের উৎসব হয়তো ফুরালো, কিন্তু স্কুল এলামনাইদের মাঝে মিলনের যে বান এসেছে তাতো সহজে ফুরোবার নয়! সকলের বিশ্বাস, প্রানের এই উচ্ছ¡াস ছড়িয়ে যাবে আগামী দিনে সবার মাঝে। আবার দেখা হবে আর ভুলে যাওয়া নয়, এই কামনায় অশ্রু সজল চোখে সমাপ্তি ঘটে অসাধারন এক মিলনোৎসব।
পরিশেষে, অসাধারন এক অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য আগ্রাাবাদ স্কুল এলামনাই এসোসিয়েশন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত সকলকেই ভালোবাসা আর অশেষ কৃতজ্ঞতা।