উৎপাদন বন্ধ ৭০ শতাংশ ইস্পাত কারখানায়

51

সবুর শুভ

ইস্পাতের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দামে আগুন। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্যয় ও বিক্রির দামের সাথে সমন্বয় করে উৎপাদন ঠিক রাখতে পারছে না ইস্পাত কারখানাগুলো। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের ৭০ শতাংশ কারখানা। এতে বেকার হয়ে গেছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
করোনার ধকলে এমনিতেই কাবু ইস্পাত কারখানাগুলো। তার উপর স্ক্র্যাপের দামবৃদ্ধির খড়গ যেন মরার খাড়ার ঘা। তবে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যান্য খরচ এবং স্থায়ী কর্মীদের বেতন অব্যাহত থাকায় লোকসান আরো বেড়ে যাচ্ছে কারখানা মালিকদের। স্ক্র্যাপের দামবৃদ্ধির কারণে রডের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
তথ্যমতে, বর্তমানে দেশিয় বাজারে প্রতিটন মেল্টিং স্ক্র্যাপ ৫৪ হাজার টাকা, প্লেট ৫৮ হাজার টাকা এবং বিলেট ৬৩ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে মেল্টিং স্ক্র্যাপ ৩০-৩২ হাজার টাকা, প্লেট ৩৫-৩৭ হাজার টাকা এবং বিলেট ৪০-৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতিটন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৪৯৫ ডলারে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৪ হাজার ৫৫০ টাকা। অথচ গত এক বছর আগে মাত্র ২৭০-৩০০ ডলারে বিক্রি হতো। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগে স্ক্র্যাপের দাম ছিল ২৪ হাজার ৩০০-২৭ হাজার টাকা।
রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে রড তৈরির কাঁচামাল মেল্টিং স্ক্র্যাপ, প্লেট ও বিলেটের দাম দফায় দফায় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে যেই পরিমাণ কাঁচামালের দাম বেড়েছে সেই অনুযায়ী রডের দাম বাড়ানো যায়নি দেশে বিক্রির সক্ষমতা বিবেচনায়। ফলে সাধারণ গ্রেডের রডের বিক্রি কমে যাওযায় অনেক কারখানা মালিক উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব কারণে চট্টগ্রামের ৭০ শতাংশ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ৬০ গ্রেড ও সাধরণ ৪০ গ্রেডের রডের চাহিদা কমে গেছে দামবৃদ্ধির কারণে। বর্তমানে দাম অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে সাধরণ মানুষের বাড়ি-ঘর নির্মাণে এখন স্থবিরতা বিরাজ করছে। এখন মূলত উচ্চবিত্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রকল্পের জন্য রড কেনাবেচা হচ্ছে। তাও প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়নের চাপাচাপিতে।
চিটাগাং স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার এসোসিয়েশন বাংলাদেশের তথ্যমতে, সব কারখানা সচল থাকলে চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩২ লাখ টন এম এস রড তৈরি হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় এখন প্রতিদিন রড উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৫-২০ লাখ মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে চিটাগাং স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি মোহাম্মদ লোকমান জানান, অটো (৭৫ গ্রেড), সেমি অটো (৬০ গ্রেড) ও ম্যানুয়ালসহ (৪০ গ্রেড) প্রায় ৫০টি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। কাঁচামালের দামবৃদ্ধির প্রভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার মধ্যে বেশিরভাগই ম্যানুয়াল। তাছাড়া কিছু সেমি অটো কারখানাও বন্ধ রয়েছে। বাড়তি দামে কাঁচামাল কিনে কোনোভাবে উৎপাদন স্বাভাবিক রেখেছে শতভাগ অটো কারখানাগুলো। দেশে তিন ধরনের ইস্পাত কারখানা রয়েছে- অটোমেটিক, সেমি অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল। এরমধ্যে বিএসআরএম, কেএসআরএম, একেএসসহ সারা দেশে প্রায় ৩৫টি অটোমেটিক মিলস রয়েছে। আর ক্ষুদ্র এবং মাঝারি মানের উদ্যোক্তাদের মিলগুলো হলো- সেমি অটো এবং ম্যানুয়াল।
তথ্যমতে, বাজারে বর্তমানে ৭৫ গ্রেডের (টিএমটি) বিভিন্ন ব্রান্ডের এমএস রড বিক্রি হচ্ছে টন ৭৬ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা, সেমি অটো মিলের ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৬৯ হাজার থেকে-৭০ হাজার টাকা এবং ম্যানুয়াল কারখানার ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৬৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার টাকায়। এক বছর আগে বাজারে এসব ব্রান্ডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের রড টন ৫২ হাজার -৫৪ হাজার টাকা, ৬০ গ্রেডের রড ৪৩ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা এবং সাধারণ ৪০ গ্রেডের রড ৩৭ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে চাহিদার চেয়ে রড কম উৎপাদিত হওয়ার প্রভাব পড়ছে ক্রেতাদের উপর। দাম বেড়ে যাওয়ায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে গিয়ে বেশি দামে রড কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।