উৎপাদন ও বিশ্বাস

2

 

শ্রীলঙ্কায় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৭৩০০ ফুটেরও উপরে অ্যাডামস্ পিক বা শ্রী পদ অবস্থিত। শ্রী পদ বা পবিত্র পায়ের(Sacred Footprint) ছাপ (৫ফুট ১১ ইঞ্চি ) লম্বা ও সেমেটিক ধর্মের অনুসারীরা মনে করেন, এই পবিত্র পায়ের ছাপ বা ফুটপ্রিন্ট হচ্ছে অ্যাডাম বা হজরত আদমের। বৌদ্ধরা মনে করেন,এই ছাপ বুদ্ধের। হিন্দুরা মনে করেন, শিবের পায়ের ছাপ। কেউ কেউ সেইন্ট টমাস এর পদচিহ্ন ও বলে থাকেন। এই পায়ের ছাপ দেখতে সকল ধর্মের মানুষই সেখানে যান ওসবাই যার যার মতো ভক্তি,শ্রদ্ধা করেন। এই নিয়ে সা¤প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে শোনা যায়না। নিচেই আছে শ্রী লঙ্কা ও ভারতের মাঝে এ্যাডামস্ ব্রীজ। হিন্দুরা বলেন,রাম সেতু ও প্রাচীন কালে এখানে সেতু ছিলো বলে ধারণা করা হয়। এই নিয়ে ব্যাখ্যার ভিন্নতা থাকলেও মার মার, কাট কাট অবস্থা কখনোই তেরি হয়নি।
এ্যাডামস্ পিক,লোকালয় থেকে অনেক দূরে ও এ্যাডামস্ ব্রীজ সমুদ্রের উপরে বা প্রণালীর উপরে সেতু। লোকালয় নেই,কাছে,কিনারে। সমাজতত্তে¡র ভাষায় সামাজিক সম্পর্ক থেকে বাইরে বা দূরেও বিশ্বাস নিয়ে হাঙ্গামাও নেইও যত বিতর্ক আর সংঘাত তা সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে অবস্থান করা মানুষগুলোর মধ্যে।
যাঁরা বিশ্বাসে বিশ্বাসী তাঁরা, বিশ্বাসের খাদ খোঁজেন না। যাঁরা সামাজিক সম্পর্কের লেনদেন বুঝেন ভালো, তাঁরা বিশ্বাসকে মোচড় দেন।
মানুষ খায় দায়, গান গায়, খেলে, ঘুম যায় আর বিশ্বাসের চর্চা করে। খাওয়া-দাওয়া মেটানোর জন্য অর্থনীতি আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। গান-বাজনা, খেলাধূলার জন্য সংস্কৃতি। সংস্কৃতির আর ও এক অংশ বিশ্বাস। লোকালয়ের বাইরে বিশ্বাসের হাঙ্গামা নাই ।কারণ, ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনীতি সেখানে মৌলিক নয়। যেখানে উৎপাদন মুখ্য, সেখানে সংঘাত কম। উৎপাদনকে নিরঙ্কুশ করতে গেলে,সামাজিক স্থিতি ও সংহতি দরকার। কিন্তু উৎপাদন ও বন্টন তো হয়, সামাজিক সম্পর্কের মাঝে। সামাজিক সম্পর্ক স্তরে বিভক্ত, বিভক্ত বর্ণে, বিশ্বাসে। এই বিভক্তির কেউ যদি মনে করেন যে তিনি বঞ্চিত, তাহলে তার প্রকাশ হয়, হিংসা ও ক্রোধে। প্রকাশ পায়, গল্প, কবিতা, সিনেমা-নাটকে। ভক্তি যেখানে প্রধান, সংঘাত নেই সেখানে, উৎপাদন ও বণ্টনে বঞ্চনা যদি থাকে, বিশ্বাসে ও আচারে বিভেদ সেখানে ঘর করে।
মানুষ যদি উৎপাদক না হতো, সামাজিক সম্পর্কের ভেতরে না হতো অবস্থান, তাহলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হতো অনেক কম। আমরাতো গভীর সামাজিক সম্পর্কের মাঝে। তাহলে কি পেছনে যাবো। নিশ্চয় না।
প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগে, প্রকৃতির দূষণ হয়। তাই বলে, প্রযুক্তির উদ্ভাবন বন্ধ করবোনা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটাবো। সমাজকে পেছনে নিব না, সম্প্রীতি-বান্ধব সম্পর্ক নির্মাণ করবো।