উৎপাদনে সক্ষম, তবুও দুই বছর ধরে বন্ধ

41

১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ধরে রাখতে নিয়ম অনুয়ায়ী আড়াই বছর আগে কেন্দ্রটিতে ওভারহলিং সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু এ কেন্দ্রের শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয় নতুন স্থাপিত ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এরপর থেকে এ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ। এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিট দুই টাকার কম। সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন কেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে, কিন্তু কার স্বার্থে এ কেন্দ্রটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়। ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত কর্মচারীরা তাদের পুরনো কর্মস্থল তথা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রেই ধরে রাখতে চায়। এ নিয়ে রশি টানাটানি শুরু হয়েছে শ্রমিক আর বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে। এরই মাঝে বিদ্যুৎ শ্রমিকরা ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। তারা ওই কেন্দ্র ছেড়ে গেলে ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে এসব বিষয় জানা যায়।
জানা গেছে, ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে সক্ষম হলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগ বুঝে নেয়ার পরও ওই কেন্দ্র পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নি। ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জনবল ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয় সাময়িকের জন্য। কিন্তু দুই বছর পার হলেও নতুন ওই কেন্দ্রে এখনো জনবল নিয়োগ করা হয় নি। জনবলের অভাবে এ দুই বছর ধরে বন্ধ আছে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন পটিয়া উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে কর্ণফুলী নদী ও শিকলবাহা খালের মোহনায় ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাসনির্ভর শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই কেন্দ্র ঘিরে শিকলবাহায় পিডিবির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল ও আবাসিক এলাকা। ৬০ মেগাওয়াটের হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে ৩৫ বছরের পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা কিছুটা হ্রাস পায়। এরপরও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখে মন্ত্রণালয়। সরকার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। সে থেকে এখনো পর্যন্ত ওই কেন্দ্র পরিচালনার জন্য পুরোপুরি জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয় নি। ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক ও কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের পরিচালনার জন্য স্থানান্তর করা হয়। জনবল নিয়োগের পর এসব কর্মচারীকে ৬০ মেগাওয়াটে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু দুই বছরে জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নি এবং ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচলে তালবাহানা শুরু করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে কর্মরত ৬০ মেগাওয়াটের সকল কর্মচারী কর্মবিরতির হুমকি দেয়। শ্রমিকদের দাবি তাদের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মানা হয় নি।
সিবিএ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। আন্তরিকতা থাকলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এসব কর্মচারীকে বসিয়ে বেতন না দিয়ে ২২৫ ও ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র সমন্বয় করে পরিচালনা করা যায়। কিন্তু শুধুমাত্র আন্তরিকতার অভাবে এ কেন্দ্রটি উৎপাদনে সক্ষম হয়েও পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে তথাযথ তথ্য দেয়া হচ্ছে না এবং এ কেন্দ্রটি চালুর উদ্যোগের অভাব রয়েছে। ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের কর্মচারীরা ২২৫ মেগাওয়াটে আর কাজ করতে রাজি নয়। তারা যেকোন সময় ওই কেন্দ্র থেকে একযোগে ফিরে আসতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দ্রæত এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) ভূবন বিজয় দত্ত বলেন, ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে ২২৫ মেগাওয়াটে নেয়ার ঘটনা সত্য। তবে এখনো প্রয়োজনীয় জনবল না পাওয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের শ্রমিকদের ফেরানো যায় নি। এ কারণে সক্ষমতা সত্তে¡ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এরই মাঝে দু’বার কেন্দ্রটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সে সময় একবার মিঠা পানি ও অন্যবার সামান্য দ্রæটি দেখা দেয়ায় আর চালু করা যায় নি। এরপর এ কেন্দ্রের প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। তারাও কেন্দ্রটি চালুর ব্যাপারে উৎসাহ না দেখানোয় সেটি ওইভাবেই পড়ে আছে। এখন সেটি চালু করা হলে ৪০ মেগাওয়াটের উপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত এবং খরচ তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক কম।