উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি করোনা মোকাবেলায় নতুন বিধিনিষেধ

11

 

দেশে আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মহামারি করোনা ভাইরাস। লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণের হার। সেই সাথে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণের সংক্রমণও বেড়ে গেছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চট্টগ্রামে ওমিক্রণ চিহ্নিত করার মত কোন পৃথক যন্ত্র না থাকলেও সর্দি, কাশি ও জ্বরসহ অন্যান্য আলামতগুলো অনেকটা ওমিক্রনের। সুতরাং সিজনাল ফ্লু বলে সর্দি, জ্বরকে অবহেলা করা উচিৎ হবে না। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। আইসোলেশান সেন্টারগুলো আবারও সক্রিয় করা হচ্ছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে দেশের প্রায় সর্বত্রই চলছে ঢিলেঢালা মনোভাব; সাধারণ মানুষ, গণপরিবহনসহ সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিকে এ কবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। খোলার চার মাসের মাথায় ফের বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ আছে, সেখানে অনলাইন ক্লাস চলবে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ শর্তসাপেক্ষে সব ধরনের অনুষ্ঠানে সীমিতসংখ্যক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতার বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নিজে সচেতন না হলে শুধু বিধিনিষেধ আরোপ করে করোনার সংক্রমণ রোধ করা যাবে না।
করোনা মোকাবিলায় এর আগে জারি করা হয়েছিল ১১ দফা বিধিনিষেধ, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকারের সেসব বিধিনিষেধ বলবৎ থাকা সত্তে¡ও গণপরিবহণে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। শহরের অলিগলি, কাঁচাবাজার-সর্বত্র মানুষের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্বেও কোন বালাই নেই। সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায় থেকে ব্যাপক কার্যক্রম চলমান থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা প্রদর্শন করছে। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও খোলা রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র, চলছে বাণিজ্য মেলা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছুটির দিনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ও বাণিজ্য মেলার বেশিরভাগ স্থানে বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে করোনার ঊর্ধ্বগতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতিতে আগামী কয়েক দিনে করোনার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা প্রবল।
কাজেই করোনার ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপের পাশাপাশি তা কার্যকর করতেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থাৎ বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারকে কঠোর হতে হবে। একইসঙ্গে বাড়াতে হবে টিকাদান কর্মসূচির পরিসর। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। টিকা নেওয়ার পরও কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষার মাত্রা কমে যাওয়া; একাধিক ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়া-এসব বিষয় বহুল আলোচিত। বস্তুত টিকা নেওয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যারা টিকা নেয়নি তাদের তুলনায় টিকা নেওয়া ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার হার কম। কাজেই সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে একাধিক ডোজ টিকা নেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেহেতু ওমিক্রম অতি দ্রæত ছড়ায়, সেহেতু সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত। কাজেই এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। যেহেতু ১২ বছরের নিচে কমবয়সী শিশুদের এখনই টিকার আওতায় আনা যাচ্ছে না, সেহেতু শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষটি আরো শৃঙ্খলায় আনা উচিৎ। যে করোনা প্রতিরোধের জন্য টিকা, সেই টিকা গ্রহণ করতে গিয়ে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের একজায়গায় জড়ো করে টিকা দেয়াতে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্টদের গভীর মনোযোগ দেয়া জরুরি।