উপেক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে কঠোর মনোযোগ দিন

13

মিরসরাইর খৈয়াছড়া ঝর্নারোড রেলক্রসিং এ ভয়াবহ মাইক্রোবাস-ট্রেন সংঘর্ষে ১১ জন তাজা তরুণ প্রাণের মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। সাধারণত প্রতিদিন সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে বহু নর-নারী, শিশু-কিশোর। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকের দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছার তাড়া। সবধরনের যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা যানবাহন চালকদের থাকা প্রয়োজন তা কার্যত খুব একটা দেখা যায় না। ফলে সড়কে সবধরনের যানবাহন কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। দেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সড়ক মানেই মৃত্যুফাঁদ। চালকের অদক্ষতা, বিবেচনাহীন গাড়ির গতিবেগ এবং দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহনের চালকদের প্রতিযোগিতা, যান্ত্রিক গোলযোগ অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। দেশের পরিবহন সেক্টরে রেল যোগাযোগ অনেকখানি নিরাপদ। এ জন্য রেলে করে মানুষ সম্ভব সব এলাকায় যাতায়াতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু রেলের টিকেট নিয়ে হয়রানির শেষ নেই। রেলের টিকেট বাণিজ্য এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ নিয়ে যাত্রীদের মনে ক্ষোভের শেষ নেই। ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যা দেশে বেশি দেখা যায় না। তবে রেল ক্রসিংয়ে গেইটম্যান লাইন ম্যানের ভূমিকা নিয়ে না প্রশ্ন দেখা যায়। ক্রসিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যানের অবহেলার কারণে রেলপথের ক্রসিংগুলোতে মাঝেমধ্যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। চট্টগ্রাম ও জাতীয় পত্রিকাসমূহের প্রতিবেদন হতে জানা যায় ২৯ জুলাই মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝর্না রোড এলাকায় রেলক্রসিংয়ে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে ট্রেনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। ঘটনাটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে ব্যাপক বেদনা-বিষাদ সৃষ্টি করেছে। এমন দুর্ঘটনা অনভিপ্রেত। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ এ দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত হবে, প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে। দোষি নির্দোষ প্রমাণিত হবে কিন্তু ১১টি মূল্যবান তাজা প্রাণ আর ফিরবে না। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য আমরা পত্রিকান্তরে দেখেছি। সেসব বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় মাইক্রো চালকের দায়বদ্ধতার অভাব, যাত্রীদের দ্রæত গাড়ি চালানোর তাগিদ ইত্যাদি কারণ উপেক্ষা করার মতো নয়। কোচিংয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফর তথা আনন্দ ভ্রমণে গিয়েছিলো। এ বিষয়টি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত প্রোগ্রাম। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে যাবে। এসব ক্ষেত্রে আনন্দের অতিশর্য্য গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিতে দেশের সড়কসমূহে মৃত্যুঝুঁকি তথা দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। তার উপর কোচিং সেন্টারের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চালককে বেপরোয়া গাড়ি চালানো তাগাদা গ্রহণ যোগ্য নয়। রেলক্রসিং পার হওয়ার পথে চালক একটু ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে পারলে খৈয়াছড়ার দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। আমাদের চলার পথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে চালক, যাত্রীসহ সকল পক্ষের ধৈর্য্য, দায়বদ্ধতা এবং জনসচেতনতা খুবই জরুরি। পত্রিকান্তরে রেলক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদ এমন ভাস্যও আমরা দেখেছি। এ কথা সত্য যে, রেলক্রসিংয়ের গেইট লক করার দায়িত্বে নিয়োজিতদের অবহেলার কারণে দেশের বহু রেলক্রসিংয়ে বিভিন্ন গাড়ির সাথে রেলের ধাক্কায় বহু মানুষের প্রাণনাশ হতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের প্রতি আরো নজরদারী বাড়াবে এমন দাবি সর্বস্তরের মানুষের। আমাদের মনে রাখতে হবে কোন আনন্দ ভ্রমণ যেন বেদনা ভ্রমণে রূপান্তরিত না হয়, আনন্দের মুহূর্তে হুঁশ হারানো কারো জন্যে শুভ নয়। আমরা মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝর্না রেলক্রসিংয়ের বেদনাদায়ক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। প্রত্যেক প্রকার গাড়ির চালকদের দেশের সকল রেলক্রসিং এলাকায় অধিক সতর্কতা, ধৈর্য্যশীল ও সচেতন হতে হবে। সার্বিক জনসচেতনতা সকল প্রকার দুর্ঘটনা এড়ানোর পক্ষে অধিক কার্যকর। দুর্ঘটনার পর পক্ষে বিপক্ষে কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করে সম্ভাব্য দুর্ঘটনায় সবাই সচেতন হলে দুর্ঘটনা এড়ানো সহজ হয়। আমরা চাই আমাদের দেশের সকল পথের যাত্রা নিরাপদ থাকুক। সর্বক্ষেত্রে চালকদের ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে হবে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য যেহেতু বেশি, সেহেতু দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছার মানসিকতায় বেপরোয়া গাড়ি তথা সকল যানবাহন চালানোর মানসিকতা চালকদের বর্জন করতে হবে। কর্তৃপক্ষসমূহ দেশের সকল যানবাহনের যাত্রীদের জীবন রক্ষার্থে সড়ক সম্পর্কিত আইন ও বিধিবিধান কার্যকর করতে আন্তরিক হলে, চালকরা দায়বদ্ধতার পরিচয় দিলে, দেশে যানবাহন দুর্ঘটনা কমে যেতে বাধ্য।