উপেক্ষিত গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিক : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

54

ড. মো. রফিকুল ইসলাম

আমাদের জীবনে গ্রন্থাগার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার একটা গণপরিসর তৈরি করেছে। যা সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনার ভিত গড়েছে। এক সময়ে কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ক জার্নাল পড়ার সুযোগ ছিল গ্রন্থাগারে। এর ফলে চৈতন্য গ্রন্থাগারের সঙ্গে পাঠকদের বাল্যস্থতি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। তথাপি গ্রন্থাগার হলো সামাজিক শিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ জাগরণ। এ কারণে গ্রন্থাগারকে জাতির দর্শন বলা হয়। তাছাড়া জাতি ও দেশ গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। তার দৃষ্টান্ত অবিভক্ত বাংলার গ্রন্থাগার আন্দোলন শুরু হয়েছিল পরাধীন ভারতে। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরাই অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে তুলেছিলেন অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী গ্রন্থাগার। এসব গ্রন্থাগারে থাকত দেশপ্রেমিকদের জীবনীগ্রন্থ ও দেশ-বিদেশের মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে লেখা অসংখ্য বই। আর এসব গ্রন্থাগারের মাধ্যমে পাড়ায়-মহল্লায় তরুণ যুব-সমাজকে সংগঠিত করা হতো ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে।
পরবর্তীকালে মুসলমানদের শাসন আমলে অনেক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর ফলে সভ্যতার ইতিহাসে স্পেনে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটি বিশ্বের গুণী ও জ্ঞানীদের তীর্থ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। এদিকে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পাঠক সমাজ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক হর্ষ দত্তের বক্তব্যে উঠে এল এমনই ঐতিহাসিক বাস্তবের কথা। আর সেখানে সুনীল দাস এর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। প্রয়াত গ্রন্থাগারিকের স্মরণে আয়োজিত ‘উপেক্ষিত গ্রন্থাগার ও উদাসীন পাঠক’ শীর্ষক ভাষণে হর্ষ দত্ত বলেন, বইমেলার বিপুল ভিড় দেখে বইয়ের কদর সম্পর্কে ভালো আন্দাজ করা যায় না। তবে গ্রন্থাগারেও বইয়ের মেলা তা হলে সেখানে কেন ভিড় নেই। বিষয়টা বেশ চিন্তা ও উদ্বেগের। কেন এই উপেক্ষা ? যাঁরা বরাবর গ্রন্থাগারে আসেন, তাঁরাও কেন মুখ ফেরাচ্ছেন। ১৯২৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, মুশকিল হচ্ছে অধিকাংশ গ্রন্থাগার সংগ্রহ-বাতিকগ্রস্ত। সবাই হিসেব করে, ভাঁড়াতে কত বই রয়েছে। বইগুলো কতটা কাজে লাগছে। সে খেয়াল কেউ রাখে না। গ্রন্থাগারের একটা দায় রয়েছে। গ্রন্থাগারে বই জমিয়ে লাভ নেই। সেটা পাঠক না পড়লে লাভ কী ? সে জন্য পাঠককে গ্রন্থাগার মুখী করতে হবে।
স্বাধীনতার চার দশক পরেও বাংলাদেশে কোথাও গ্রন্থাগার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশে যত্রতত্র যেভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সে হারে যদি গ্রন্থাগার গড়ে তোলা যেত তাহলে সমাজে আলোকিত মানুষের সংখ্যা বহুলাংশে বেড়ে যেত আর সামাজিক অসঙ্গতি, অস্থিরতা ও অসামাজিকতার প্রভাব সহজেই কমে যেত। বাংলাদেশে গ্রন্থাগার ব্যবস্থার বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা যাচাইয়ে বিষয়ে সরকার, ব্র্যাক ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সমম্বয়ে একটি জরিপ করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল। এ জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে ‘খরনৎধৎু খধহফংপধঢ়ব অংংবংংসবহঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদনে দেশের গ্রন্থাগার সেবার নি¤œমান ও দুরবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে। উক্ত জরিপে অংশগ্রহণ করেন অধিকাংশ গ্রন্থাগারিকগণ এবং জরিপে গ্রন্থাগারের নানা সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। যেমন-গ্রন্থাগারে বই ও জার্নালসহ প্রায় সব ধরনের উপকরণের ঘাটতি রয়েছে। আর এ জরিপে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের মতে, বাংলাদেশের গ্রন্থাগারগুলোর এখনও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নে বাইরে রয়েছে। যা গ্রন্থাগার সেবার মান কাক্সিক্ষত মানের নয়। তাছাড়া অধিকাংশ গ্রন্থাগারে কম্পিউটার থাকলেও তা পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত নয়। বিশেষ করে ইন্টারনেট সুবিধা নেই বললেই চলে। বর্তমানে দেশের গ্রন্থাগারগুলো রুগ্ন অবস্থা এবং তরুণ-তরুণীদের গ্রন্থাগারবিমুখীতা তা মোটেও জাতীয় মননশীলতার জন্য ভালো ইঙ্গিত নয়। দেশের মেধাবী ও মানবীয় সমাজ ও সুনাগরিক গঠন সর্বোপরি সুশীল জাতি গঠনে খুবই হতাশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশ তথা ঢাকা শহরে সরকারি-বেসরকারি সব মিলে গুটি কয়েক গ্রন্থাগার রয়েছে। এছাড়াও মহানগর তথা ঢাকা শহরে যানজটই নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। এ কারণে গ্রন্থাগারে যেয়ে বই পড়া অনেকটা অবাস্তব বলে মনে হয় আজকাল। ড. কুদরত-এ-খুদা এর প্রণীত বাংলাদেশের শিক্ষানীতির বিষয়ে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে হৃৎপিÐের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো যে, দেশের উন্নয়ন ভাবনার জ্ঞান তথ্যের সেই উৎস অর্থাৎ গ্রন্থাগারই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জোয়ারের পাশাপাশি জাতির জ্ঞান-বিকাশে উন্নয়নের এত অবহেলা কাম্য নয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে এগিয়েছে একথাটি কিন্তু সত্যি হলেও দেশের আদর্শিক শিক্ষার পরিশীলন, মূল্যবোধের চর্চা এবং চেতনার স্ফুরণ ঘটাতে গ্রন্থাগারের প্রতি এই অমনোযোগ সুষম উন্নয়ন ধারাকে টেকসই হতে বাধার সৃষ্টি করবে বৈকি। বর্তমান সরকার সামাজিক উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে বিভিন্ন স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প চালু করছে। অথচ জ্ঞাননির্ভর মেধাবী প্রজম্মের জন্য ও সমাজ তথা রাষ্ট্রের মানবীয় বিকাশে দেশের গ্রন্থাগারগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ নেই। কি কারণে এই দৈন্যদর্শার শিকার হলো গ্রন্থাগারগুলো। তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে সুশীল সমাজ মনে করেন।
আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আধুনিক গ্রন্থাগার স্থাপনের প্রচেষ্টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্ব পায়নি। এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেটের কোনো প্রকার সমস্যা নেই বিধায় গ্রন্থাগার উন্নয়নের কোনো বাধা নেই। তবুও কর্তৃপক্ষের গ্রন্থাগার উন্নয়নের প্রতি অবহেলা রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারগুলো যতটুকু উন্নত করার প্রয়োজন ছিল। তা কিন্তু বাস্তবে হয়নি। এদিকে কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার খুবই উন্নত তা বলা যায়। আমরা যদি বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে প্রকৃত অবহেলার চিত্র উঠে আসবে। বর্তমানে ভাড়া করা বাড়িতে পরিচালিত অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রন্থাগার ছোট পরিসরে একটি কক্ষে বিনা পদ-মর্যাদায় গ্রন্থাগার কর্মী দিয়ে গ্রন্থাগার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গ্রন্থাগার সেবা প্রদানে অনীহা। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা মনে করেন যে, গ্রন্থাগার সার্ভিস দেয়া এতটা জরুরি নয়। শুধু নাম-মাত্র গ্রন্থাগার থাকলেই চলবে। আধুনিক গ্রন্থাগার স্থাপনে কোনো উদ্যোগ নেই। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে পিয়ন/গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রি ধারী জনবল দিয়ে পরিচালনা করছে। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-প্রফেশনাল জনবল (গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিগ্রি নেই) দিয়ে গ্রন্থাগার পরিচালনা করছে। এতে করে গ্রন্থাগার ব্যবহারকারীরা তাদের কাক্সিক্ষত তথ্য সঠিক সময়ের মধ্যে পাচ্ছে না। এর ফলে গ্রন্থাগার ব্যরহারকারীরা গ্রন্থাগার ব্যবহার করার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। যা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বাধাস্বরূপ। এক্ষেত্রে গ্রন্থাগার উন্নয়নে ইউজিসির অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত।
বাংলাদেশের তথা ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালু রয়েছে। তথাপি প্রতি বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউট থেকে অসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশে মোট সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১২টি। এর মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিকাংশ গ্রন্থাগারগুলোতে গ্রন্থাগারিক নেই। অর্থাৎ হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিক কর্মরত রয়েছে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রন্থাগার পরিচালনা করার মত যোগ্য ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উচ্চতর (তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা/গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার) ডিগ্রি প্রাপ্ত গ্রন্থাগারিকের কী সত্যিই অভাব। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানগণ গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেয়ার প্রতি সদিচ্ছার অভাব। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রন্থাগারিককে নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষককে গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। যা গ্রন্থাগার উন্নয়নের বড় বাধা। কারণ যে গ্রন্থাগারিক হবেন সে কিন্তু গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। অন্যদিকে একজন শিক্ষকের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মত জ্ঞান থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তার গ্রন্থাগার সম্পর্কে সার্বিক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নাও থাকতে পারে। বিশেষ করে গ্রন্থাগারকে উন্নয়ন করা এবং পাঠকদের সার্বিক সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারিকের ভূমিকা অপরিসীম। এর প্রধান কারণ তার পেশার স্বার্থে গ্রন্থাগারকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করতে সর্বদা সচেষ্টা থাকেন। দেশের স্বার্থে তথা জনগণের কল্যাণে তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা/গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবলকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রাপ্ত জনবলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সুধী মহল তাই মনে করেন।
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রন্থাগারিকের পদ-মর্যাদা একজন অধ্যাপকের সমান হওয়ার কথা। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৯২-এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার ক্যাটাগরিতে গ্রন্থাগারিকের পদ-মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। উল্লেখ্য যে,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টে গ্রন্থাগারিকের পদ-মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সে কারণে সমাজে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গ্রন্থাগারিকের মর্যাদা তুলনামূলক কম। অন্যদিকে পাশের দেশ ভারত। সেখানে গ্রন্থাগারিক, উপ-গ্রন্থাগারিক এবং সহকারী গ্রন্থাগারিকদের পদ-মর্যাদা যথাক্রমে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপকদের সমান। তাই বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিকদের অধ্যাপকের পদ-মর্যাদা দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে গ্রন্থাগার পেশাজীবী, সচেতন নাগরিক সমাজ ও সরকারের ভূমিকা থাকতে হবে। গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারসেবা উন্নত না হলে শিক্ষাব্যবস্থার যেমন উন্নতি হবে না, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান উন্নত হবে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান উন্নতমানের না হলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবে না। আর ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময় মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক। বর্তমানে অভিভাবকরা খুবই সচেতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করেন। এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিন্তা করা উচিত। তাছাড়া দেশ উন্নত করতে হলে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের পেশার উন্নয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের জন্য পৃথক স্কেল চালু করা জরুরি। তাই জাতির স্বার্থে পৃথক পে-স্কেল চালু করার জোর দাবি জানাই। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে গ্রন্থাগারে কর্মরত পেশাজীবীদের সুযোগ-সুবিধার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

লেখক : গ্রন্থাগার বিভাগের প্রধান,
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম