উপজেলা চেয়ারম্যানদের কর্মস্থলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক

4

নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে দেশের ৪৯২ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেবে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা যেন ঠিকমতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন, তা নিশ্চিত করতেই এ নির্দেশনা দেওয়া হবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-মন্ডপে হামলার পর সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ২১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ওই সভায় মূলত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। উপজেলা চেয়ারম্যানরা যেন অনুমতি ছাড়া কর্মস্থাল ত্যাগ না করেন, সেটি বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বলা হয়েছে। আশা করি তারা নির্দেশনা মেনে চলবেন। খবর বার্তা সংস্থার।
সভায় বিভাগীয় কমিশনাররা জানান, দেশের অনেক জেলায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের কর্মস্থলে অবস্থান জরুরি। কারণ স্থানীয় সমস্যাগুলো জনপ্রতিনিধিরা যত সহজে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন, স্থানীয় প্রশাসনের
পক্ষে ততটা সহজ হয় না। জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এ জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ না করার বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন সময় বিদেশ সফর করেন। কিন্তু আগামীতে বিদেশ সফরে গেলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। যারাই এ নিয়ম ভঙ্গ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা শহরে বসবাস করেন। কালেভদ্রে তারা নিজ উপজেলায় যান। আবার কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানোর উদ্দেশ্যে রাজধানীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ফলে এসব জনপ্রতিনিধিকে সাধারণ মানুষ সহজে পান না। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এসব বিষয় মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। ফলে চেয়ারম্যানদের কর্মস্থলে রাখতে কঠোর হবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিভাগীয় কমিশনার জানান, সম্প্রতি দেশব্যাপী হিন্দু স¤প্রদায়ের মন্দির ও মন্ডপে হামলার ঘটনায় সরকার খুবই বিব্রত। হামলা ঠেকাতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনেরও দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করে সরকার। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও হামলার দায় এড়াতে পারেন না। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছেন। হামলার সময় অনেক উপজেলার চেয়ারম্যান এলাকায় ছিলেন না। এ জন্য বিভাগীয় কমিশনাররা বিষয়টি সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের নজরে এনেছেন। সভা থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের কর্মস্থলে থাকার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা এবং মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগকে কঠোর মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠিও পাঠানো হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ চিঠি যাবে চেয়ারম্যানদের কাছে। তবে মন্ত্রিপষিদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা তার এলাকায় সবচেয়ে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। তিনি যেন নিয়মিত কর্মস্থলে থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে পারেন, সে জন্য তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সম্প্রতি দেশের নানা স্থানে হামলার ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ জন্য তারা যেন আরও সতর্ক ও সক্রিয় থাকেন, সে বিষয়ে তাদের বিশেষভাবে বলা হবে।