উন্নয়ন প্রকল্প শতভাগ সম্পন্ন হলে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে

63

চট্টগ্রাম নগরীর জনদুর্ভোগ ও যানজটকে উন্নয়নের প্রসব বেদনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে। এর ফলে যানজট, জলজট, সুপেয় পানি ব্যবস্থা ও নগরীর রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের মাধ্যমে নগরবাসীর জনদুর্ভোগ আর থাকবে না।
গতকাল শনিবার সকালে হালিশহর লিলি কমিউনিটি সেন্টারে বন্দর ও পতেঙ্গা থানাধীন ওয়ার্ড সমূহে বিদ্যামান সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র এসব কথা বলেন। এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। এই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সিটি মেয়র আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে আন্তরিক। তার আন্তরিকতার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী। তিনি নির্বাচনী সভায় যে অঙ্গীকার করে ছিলেন, সেই ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন। তাই নগরীর সেবা সংস্থাসমূহের মধ্যে কেউ বসে নেই। সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত। নগর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিটি সেবা সংস্থা। বর্তমানে নগর উন্নয়নে ১ লক্ষ কোটির টাকার কাজ চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এইসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি নগরবাসীর ধৈর্য্য ধারণ এবং সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই, আমরা পরস্পর পরস্পরের সহযোগী। নগরীতে যতগুলো সেবাসংস্থা নগর উন্নয়নে কাজ করছে তাদের কাজ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত হতে হবে। অবহিত না হয়ে ঢালাওভাবে দোষ দেওয়া উচিত নয়।
তিনি আরো বলেন, দিন দিন এ শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শহরে জনসংখ্যা ও বিভিন্ন স্থাপনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু নগরীর আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যার ফলে চসিকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আর এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নগর উন্নয়নের জন্য অঢেল প্রকল্প দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলো সঠিক ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তাও বিভিন্ন মাধ্যমে মনিটারিং করছেন প্রধানমন্ত্রী। এই উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে আগামী ২০২০ সন পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এই দুর্ভোগ আগামী প্রজন্মের নাগরিকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যা আগামী প্রজন্মের জন্য এ নগরী হয়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ বাসযোগ্য। এই পরিচ্ছন্ন নগরী গঠনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও নগরীর সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবে বলে সিটি মেয়র উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছেন যার কারণে চট্টগ্রামবাসী রেকর্ডসংখ্যক উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্ধ পেয়েছেন। শুধুমাত্র সিডিএ’র মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। ইতিমধ্যে আউটার রিং রোডের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়ন কর্মকান্ডসমূহ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনগণের সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি জনদুর্ভোগ লাঘবে আউটার রিং রোডের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বারিক বিল্ডিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও সাময়িক বন্ধ রেখেছেন বলে সভায় উল্লেখ করেন। এছাড়া আউটার রিং রোডের কাজও দ্রততার সাথে সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন তিনি। তিনি জনগণকে যে কোন সমস্যায় তার সাথে সরাসরি স্বাক্ষাত করার অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জননেতা খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমরা যারা নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি রয়েছি, আমাদের মূলকাজ হচ্ছে জনগণের প্রাপ্য অধিকার রক্ষা করা। আমাদের জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, নগরীর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১নং ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তা সংস্কার, জলবদ্ধতা নিরসন, চাঁদাবাজী ও জুয়া প্রতিরোধ, যানজট নিরসন, ওয়াসার পানি সরবরাহ, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান, বেকারত্ব দুরীকরণ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং একটি পুর্ণাঙ্গ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। ৫টি ওয়ার্ডে সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এ সমস্যাগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহব্বান জানান অনুষ্ঠানের সভাপতি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এই ধরণের আয়োজনকে সেবা সংস্থার সাথে জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকারের গৃহীত প্রকল্পের ফলে ওয়াসা ক্রমান্বয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০০ কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। শহরের প্রায় ৮৬ ভাগ জনগণকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া জাইকার অর্থায়নে বারিকবিল্ডিং থেকে কাস্টম হয়ে পতেঙ্গা পর্যন্ত ওয়াসার নতুন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এ সকল উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে অত্র অঞ্চলে ওয়াসার পানি সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নিউমুরিং এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মফিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্ধকৃত নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের সমস্যা নেই বললেই চলে। তবে মেরামতজনিত কারণে মাঝে মাঝে কিছু এলাকার গ্রাহক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাননা যেটা খুবই সাময়িক। এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। গ্রাহকের ভুতুড়ে বিল এবং গড় বিল শুন্যের কোটায় নিয়ে আসার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সভায় বক্তব্য রাখেন চসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফরোজা কালাম, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কামরুল হাসান বুলু, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম, হাজী হারুনুর রশিদ, মো. আবু তাহের, সুলতান মো. নাসির উদ্দিন, হাজী শফিউল আলম, হাজী মো. ইলিয়াছ, এম হাসান মুরাদ, হাজী মো. হাসান, হোসেন মো. মুরাদ, আবদুল মান্নান, জয়নাল আবেদীন চৌধুরী আজাদ, এম এন ইসলাম, নুরুল আলম, মোছাম্মৎ শারমিন ফারুক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাজী জহুর আহমদ কোম্পানী। এতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি